ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

জবির শিক্ষার্থী কেন গর্বিত জবিয়ান?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:১১, ১৬ জুলাই ২০১৯

আগামীকাল ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশ করার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।

এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা তাদের মনের কথা তুলে ধরছেন। তাদের মধ্য থেকে জবির বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর লেখা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

কিছু কথা ছিল মনের ভিতর...

আসন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম দিবসকে সামনে রেখে আমরা জবিয়ানরা ফেইসবুকে পোস্ট দিচ্ছি আমি গর্বিত জবিয়ান।

হ্যাঁ এটা চিরন্তন সত্য কথা আমিও গর্বিত যে আমি একজন জবিয়ান

কিন্তু কেন সেই গর্বটা করি সেটা প্রকাশ না করলেই নয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক রাজধানী শহরের শত বছরের পথ চলার সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সদরঘাটে অবস্থিত।

আমরা যারা জবিয়ান আমাদের আবাসিক হল নেই আমরা বাসে ঝুলে ঝুলে অন্তত সপ্তাহে ৪ দিন সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করে দৈনিক ৩-৪টা টিউশনি করিয়ে প্রতিমাসে নূন্যতম পর্যায়ের একটা মেসে নিজের থাকা-খাওয়ার ৭-৮ হাজার টাকা নিজেই আয় করে এই শহরে এখনো ঠিকে আছি তাই আমি বলি আমি গর্বিত জবিয়ান।

অনেক সময় এলাকা থেকে অথবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বন্ধুরা ফোন দিয়ে বলে আমরা/আমি নাকি কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছি

তোদের বলছি ভাই পরিবর্তন হইনি এখানকার সিস্টেম আমাদের/আমাকে পরিনর্তন করে দিয়েছে।

জানি বিশ্বাস করবি না কিন্তু একটা মাসের জন্যে আমার পরিস্থিতি এসে দেখ তুই নিজেও পরিবর্তন হয়ে যাবি।

সকালে না খেয়ে ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্লাস করে দুপুরে না খেয়ে আবার আমাদের দৌড় শুরু হয় টিউশনির জন্যে স্টুডেন্টদের বাসায় বাসায় একটানা ৪-৫টা টিউশনি করিয়ে রাত ১০ টায় সেই অন্ধকার গলির ভিতর দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে দূরে দাড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত একটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ আর্তনাদে মাথায় আসে যে আমি সারাদিন কিছুই খাই নাই।

গলির মোড়ে মামার দোকান থেকে এক কাপ চা আর রুটি খেতে বসি হাতটা দোকানের উপরের সারিতে রাখা দামি খাবারের দিকে যায়না কারন এই হাতটার যে পকেটের গভীরতাও অজানা নয়।

মনকে বুঝাই এখন চা আর রুটি ই খাই একটু পরই তো মেসে গিয়ে ভাত খাব

মেসের পথ ধরে অন্ধকার গলি দিয়ে হাটতে হাটতে হিসেব করি এ মাসে কত টাকা কমতি আছে কত টাকা দিয়ে কতদিন চলতে হবে সে হিসাব করতে করতে গলির পথ শেষ হয়ে যায় কিন্তু আমাদের হিসাব শেষ হয় না কারণ গলির পথের একটা সীমা আছে কিন্তু আমাদের এই ৫ টাকা ১০ টাকার হিসাব যে কখন শেষ করবেন সেটা সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিয়ে দৃঢ় মনোবল আর প্রত্যয় নিয়ে পথ চলতে পারি বলেই আমি গর্বিত জবিয়ান।

 

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু সামন্য বিনোদনে সময় পার করতে চাইলেও বাড়িতে ফোন দিয়ে বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বললেই আর সেই বিনোদনের ইচ্ছা থাকে না

ভুলে যাই বন্ধুদের কথা ভুলে যাই প্রিয়জনের কথা

ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে পড়তে বসে যাই

কারণ বাবার করুণ কণ্ঠস্বর আর মায়ের মুখে সন্তানের আকাশচুম্বী সফলতা অর্জনের কথা শুনে আমরা জবিয়ানরা হাজারো ক্লান্তিকে হার মানিয়ে পড়ার টেবিলে বসতে পারি বলে, বন্ধুদেরকে,নিজের প্রিয়জন কে সময় দিতে পারি না বলে, বিনোদনের ইচ্ছাটুকুকে অবুঝ শিশুকে বুঝানোর মত করে নিজের মনকে প্রলোভন দেখাতে পারি বলে আমি গর্বিত জবিয়ান

পুরান ঢাকার মেসের প্রতিবন্ধকতা সহ্য করে টানা ২-৩ দিনে একবার ও হোটেলে ভাত না খেয়ে শুধু রুটি আর ডালভাজি খেয়ে জীবনযাপন করি

পেট ক্ষিধের জ্বালায় জ্বললেও হোটেলে গিয়ে আমরা ভাত আর রুটি-পরটার দামের পার্থক্যটা চিন্তা করে রুটি-পরটা খাই বলেই আমরা গর্বিত জবিয়ান।

আমরা টিউশনির বাসায় শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মুখের কটু কথা শুনেও কিছু মনে করিনা বলেই আমরা গর্বিত জবিয়ান।

প্রতিবন্ধক পরিবেশে নিজের জন্যে, নিজের পরিবারের জন্যে লড়াই করে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার মত দৃষ্টান্ত আমরা দেখাতে পেরেছি বলে আমরা গর্বিত জবিয়ান।

আমরা ক্লাসের জন্যে ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে ঢাকা শহরের যানযটের মধ্যে ৪ঘণ্টা বাসে ঝুলতে ঝুলতে আসি আবার ক্লাস শেষে আরও ৪ ঘণ্টা ধরে বাসে ঝুলতে মেসে ফিরি বলে আমরা গর্বিত জবিয়ান

আমরা সারাদিন না খেয়ে থেকেও বাড়ি থেকে ফোন আসলে হাসি মুখে আমি খেয়েছি বলার মত অভিনয়টুকু করতে পারি বলে আমরা গর্বিত জবিয়ান।

আমরা ঘাম ঝড়িয়ে,বাসে চড়ে, খেয়ে না খেয়ে, ঘিঞ্জি ঘনবসতি বস্তির মত পরিবেশে থেকে জীবন যুদ্ধে ঠিকে আছি বলেই আমরা গর্বিত জবিয়ান।

আমরা পুরান ঢাকার মত ঘনবসতি ঘিঞ্জি এলাকায় থেকেও পড়ালেখার উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়েও সুন্দর মনোরম পড়ালেখা করার মত উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীর চেয়ে ভাল কিছু করে দেখিয়েছি বলে আমরা গর্বিত আমরা জবিয়ান।

বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমরা আলাদা, আমরা অনেকখানি ভিন্ন, আমরা অনেক বেশি পরিশ্রমী বলে আমরা গর্বিত আমরা জবিয়ান।

আমরা অনেকই বলি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রতিবন্ধকতা যেমন... আবাসিক হল নেই, ছোট ক্যাম্পাস, ১১ একর জায়গায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী, ক্যান্টিনের খাবারের মান ভালো না, ক্যান্টিনের সংখ্যা কম এত সব প্রতিবন্ধকতা থাকার সত্বেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদেরকে জীবন যুদ্ধে ঠিকে থাকতে শিখিয়েছে, নিজের পায়ে দাড়াতে শিখিয়েছে। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরনের নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করতে শিখিয়েছে।

তাই আমি মাথা উচু করে বলব আমি গর্বিত একজন জবিয়ান।

এগিয়ে যাক প্রাণের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বেঁচে থাকুক জগন্নাথের আকাশে ঝলঝল করতে থাকা অপার সম্ভাবনাময়ী প্রতিটা গর্বিত জবিয়ান।

সাজ্জাদুল ইসলাম রিয়াদের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি