ঢাকা, বুধবার   ১৫ মে ২০২৪

ট্রাম্পের শেষ ট্রামকার্ড ৬ জানুয়ারি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৩:৩৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬ জানুয়ারির ঘটনাবলী হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোটের ফল উল্টে দেবার ক্ষেত্রে ‘শেষ সুযোগ’ এনে দিতে পারে। কারণ, ওই দিন কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গণনা করা হবে। আর এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের যে ফলাফল জানা গেছে সেটা এখনো ‘আনুষ্ঠানিক’ ফল নয়। এই ভোটের ফল পাঠানো হবে ফেডারেল রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং আগামী ৬ জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করা হবে কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে।

আরও ৪ বছর ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রেখে দিতে একটা প্রয়াস নিচ্ছেন কয়েকজন সেনেটর এবং কংগ্রেস সদস্য। তারা আরিজোনা পেনসিলভেনিয়া, নেভাডা, জর্জিয়া ও উইসকন্সিন- এই রাজ্যগুলোতে অবৈধ ভোট ও জালিয়াতির লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন। যাতে অন্তত একজন সেনেটরের স্বাক্ষর থাকবে।

তাদের লক্ষ্য ওই রাজ্যগুলোর ভোট ‘ডিসকোয়ালিফাই’ বা বাতিল করা।

আলাবামা রাজ্যের রিপাবলিকান সেনেটর ব্রুকস এদের একজন। মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলছেন, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী সেদিন সুপ্রিম কোর্টসহ যেকোন আদালতের বিচারকের চেয়ে বড় ভূমিকা আছে কংগ্রেস সদস্যদের। ‘আমরা যা বলবো তাই হবে, সেটাই চূড়ান্ত’- বলেন তিনি।

এ ধরনের অভিযোগ উঠলে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ফলাফল প্রত্যয়ন করতে অস্বীকার করলে কী হবে- তা নিয়ে মার্কিন বিশ্লেষকরা নানা রকম চিত্র তুলে ধরছেন।

মি. ব্রুকস বলছেন, ‘আমার এক নম্বর লক্ষ্য হলো আমেরিকার ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা- যা ভোটার জালিয়াতি বা ভোট চুরিকে খুব সহজে মেনে নিচ্ছে- তা মেরামত করা।’

ব্রুকস আরও বলেন, ‘আর এটা থেকে একটা বোনাস মিলে যেতে পারে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে জিতে গেলেন। কারণ আপনি যদি অবৈধ ভোটগুলো বাদ দেন এবং যোগ্য আমেরিকান নাগরিকদের আইনসঙ্গত ভোটগুলোই শুধু গণনা করেন- তাহলে তিনিই জিতেছেন।’

কিন্তু এরকম কোন প্রক্রিয়া হবে জটিল এবং দীর্ঘ। উনবিংশ শতাব্দীর পর যুক্তরাষ্ট্রে কখনো এমনটা হয়নি।

প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দু’ঘন্টা করে বিতর্ক এবং ভোটাভুটি হতে হবে। কোন একটা রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট বাতিল করতে হলে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ এবং রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সেনেটকে একমত হতে হবে।

নিশ্চয়ই ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ভোট বাতিলের চেষ্টা অনুমোদন করবে না। তাছাড়া রিপাবলিকান কয়েকজন সেনেটরও এভাবে ভোট বাতিলের প্রয়াস জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা এ চেষ্টার বিপক্ষে ভোট দিলেই জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে।

তবে এক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ৬ জানুয়ারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন কংগ্রেসের সেই অধিবেশনের সভাপতি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। কারণ তিনিই সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটের খামগুলো খুলবেন এবং তার ফল ঘোষণা করবেন।

১৯৬০ সালে রিচার্ড নিক্সন এবং ২০০০ সালে এ্যাল গোরকে এভাবেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে তাদের নিজেদের পরাজয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর বিজয়কে প্রত্যয়ন করতে হয়েছিল। তারা এটা করতে গিয়ে তাদের নিজেদের দলের আইনপ্রণেতাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেছিলেন।

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট যে ভূমিকা পালন করেন তার প্রতি লোকে এতদিন কোন দৃষ্টি দেয়নি, এটা নিয়ে ভাবেওনি। কিন্তু যেহেতু প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প- তাই আপনাকে সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হবে’- বলছেন গ্রেগরি বি ক্রেইগ। যিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় হোয়াইট হাউসের একজন আইনজীবী ছিলেন।

তবে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স আছেন উভয় সংকটে। এতদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের বিশ্বস্ত ছিলেন তিনি, তেমনি তিনি আইন মেনেও চলেছেন। 

এখন দেখার বিষয় যে, নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে নিয়ে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে তার নিজের দলের ভোটারদের বিরাগভাজন হবার ঝুঁকি নেবেন? নাকি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে দিবেন?

সূত্র: বিবিসি বাংলা
এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি