ঢাকা, রবিবার   ২৬ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব / Upcoming UN Secretary General

ড. ইউনূসের জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:৪৩, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৫৬, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরই মধ্যে সংস্থাটির পরবর্তী মহাসচিব কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠক শেষে এই আলোচনা আরও ঘণিভূত হতে শুরু করেছে। কারণ সামনের মাসের শেষ নাগাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত জোরালোভাবে তিনজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় আছে। এছাড়া আরো কয়েকজনের সম্ভাবনা নিয়েও চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। যার মধ্যে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অবশ্য বলছে, জাতিসংঘ মহাসচিব পদে তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি গুজব। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু না থাকলেও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম আলোচনায় থাকার বিষয়টি আরও আগে থেকেই আলচনায় আছে এবং তার নাম আলোচনায় আসা অস্বাভাবিক নয়।

১৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদের সভাপতি যৌথভাবে মনোনয়ন আহ্বানের একটি চিঠি পাঠানোর মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। রয়টার্স জানিয়েছে, এই চিঠিটি চলতি বছরের শেষের দিকে পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ মনোনয়ন দিতে হবে।

সাধারণত এই পদটি বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পালাক্রমে দেওয়া হয়। যেমনঃ ২০১৬ সালে পর্তুগালের অ্যান্টোনিও গুতেরেস নির্বাচিত হওয়ার সময় এটি পূর্ব ইউরোপের পালা ছিল। এবার তালিকায় আছে লাতিন আমেরিকার নাম, যদিও কিছু কূটনীতিক মনে করছেন অন্য অঞ্চল থেকেও প্রার্থী আসতে পারে। এমনটাই জানানো হয় রয়টার্সের বিশ্লেষণে।

জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক প্রচারণামূলক ক্যাম্পেইনগুলো যেমনঃ Lowy institute কিংবা 1 for 8 billion এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মহাসচিব পদে জোরালোভাবে যে তিনজনের নাম প্রকাশ্যে এসেছে তারা হলেন—চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশলে, আর্জেন্টিনার নাগরিক ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি এবং কোস্টারিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) মহাসচিব রেবেকা গ্রিনস্প্যান। তারা তিনজনই দক্ষিণ আমেরিকার ক্যান্ডিডেট।

এই ৩ জন ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি নাম ‘রিউমারড পটেনশিয়াল ক্যান্ডিডেটস’ হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। তবে এ তালিকায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না থাকলেও দেশের অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সূত্র বলছে মহাসচিব প্রার্থী হিসেবে তার নাম আলোচনায় থাকার বিষয়টি পুরনো।

এদিকে একটি জাতীয় দৈনিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, “জাতিসংঘ মহাসচিব পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামটি স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনায় এসেছে তাও প্রায় ছয় মাস হয়ে গেছে। তবে বিষয়টি অতিসাম্প্রতিককালে সরকারি পর্যায়ের কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনায় এখনো ওঠেনি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে কর্মরত কারো সঙ্গে তার মহাসচিব পদে প্রার্থিতার বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের কোনো সূত্রের যোগাযোগ ঘটে থাকতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের সর্বশেষ সাধারণ পরিষদের সভায় গুতেরেসের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎও হয়েছে। যদিও সেই সাক্ষাতে মহাসচিব পদ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না”।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‍এটা পুরোটাই রিউমার, এটার কোনো ভিত্তি নেই।’

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ মহাসচিব হওয়াটা খুবই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। কিন্তু এশিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বান কি মুন ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর পদটি গেছে ইউরোপের দেশ পর্তুগালে। এখন আবার এশিয়া থেকে মহাসচিব নির্বাচিত হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। বরং এবার মহাসচিব হওয়ার পালা এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার কোনো নাগরিকের। এবং একজন নারী প্রার্থী এবার মহাসচিব হওয়ার গুঞ্জন বেশ চড়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে তিনজনের নাম প্রকাশ্যে এসেছে তার মধ্যে দুজনই নারী।

মহাসচিব নির্বাচন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ ৮১তম সাধারণ পরিষদে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের নিকট মহাসচিব নির্বাচনের জন্য একজন প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করবে।

নিরাপত্তা পরিষদ গোপন ভোটের মাধ্যমে (যা “straw poll” নামে পরিচিত) প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালাবে যতক্ষণ না কোনো প্রার্থীর বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো যায়। প্রতিটি প্রার্থীর জন্য ভোটের তিনটি বিকল্প থাকবে—“সমর্থন”, “বিরোধিতা” বা “মতামত নেই”। শেষ পর্যন্ত, নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, চীন ও ফ্রান্স—এর সম্মতি পাওয়া বাধ্যতামূলক। ২০১৬ সালে যখন গুতেরেসকে নির্বাচিত করা হয়েছিল, তখন নিরাপত্তা পরিষদকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ছয়টি “straw poll” আয়োজন করতে হয়েছিল।

ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তা পরিষদ একজন প্রার্থীর নাম সাধারণ পরিষদে নিয়োগের সুপারিশ পাঠায়।

সব বিশ্লেষন মিলিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচলে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বলে ধারনা করা যায়। তবে যদি বাংলাদেশ প্রফেসর ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে তবে তিনিও একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে থাকবেন বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মত দিচ্ছেন।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি