ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে সরগরম ঢাবি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত : ১৪:২৬, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

আইনের জটিলতা কাটিয়ে দীর্ঘ ২৯ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দ্বার খুলছে। ইতোমধ্যে ভোটের দিন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ মার্চ।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনে কারা প্রার্থী হতে পারবেন সে আলোচনা ক্যাম্পাসের সর্বত্র। ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছে প্রতিমুহূর্তে। এদিকে দিন যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তত আলোচনা বাড়ছে। সেই আলোচনা আরো জোরদার হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর।

ভোটের হাওয়া লেগেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। তবে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ডাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, প্রাধ্যক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে কয়েক দফায় মতবিনিময় সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আচরণবিধি, তফসিল, গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

আর এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট, যার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি)। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বৈঠক শুরু হবে। যেখানে কার্যতালিকায় ডাকসু নির্বাচনের বিষয়গুলো অগ্রভাগে রাখা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছ থেকে সুপারিশ নিয়ে উপাচার্যের কাছে জমা দেয়।

 

নির্বাচনে কারা অংশ নেবে, নিয়মিত শিক্ষার্থীরা কারা, কত সেশন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবে, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা, এমফিল, পিএইচডির শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে কিনা- সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এসব বিষয় এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

সিন্ডিকেট সভা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী গঠনতন্ত্র যেন হয়, সিন্ডিকেট সভার কাছে সেই প্রত্যাশা থাকবে। প্রত্যাশা করি, আচরণবিধিও যেন বাস্তবসম্মত হয়।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান রাফসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সহাবস্থান চেয়েছিলাম। এখনও সেটা নিশ্চিত হয়নি। সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা গেলে ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, সব সংগঠনের নির্বিঘ্নে প্রচারের সুযোগসহ আরও কিছু দাবি ছিল। সিন্ডিকেট এসব দাবি গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, সিদ্ধান্তগুলো একপক্ষীয় হবে না, সিদ্ধান্তে ছাত্রদের দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটবে। আশা করছি, এমন কোনো আইনি জটিলতা দেখা দেবে না, যাতে নির্বাচন আবারও পিছিয়ে যাবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যেসব দাবি দিয়েছি, তা শুধু পরিষদের নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবার দাবি। সবার প্রত্যাশা- প্রশাসন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আছে। সেখান থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে, তা আগে দেখি। তারপর আমরা নির্বাচনী প্যানেল ঘোষণা করব। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কিন্তু আমরা নেতা হওয়ার জন্য আন্দোলন করিনি। ওই সময় সঙ্গে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন এবং তাঁরাই মূলত আমাদের নির্বাচনে আসতে আগ্রহী করে তুলেছে। আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি, এটা নিশ্চিত।’

এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভার প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ২৯ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভা আছে। এতে ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তাবিত সব বিষয় এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। সিন্ডিকেট এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। প্রথমে পরোক্ষ নির্বাচন হলেও স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-আন্দোলনসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে ডাকসুর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ডাকসু। আজকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাই একসময় ডাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন। এককথায় বলা যেতে পারে, দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ডাকসু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও ডাকসু গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। ডাকসু নেতাদের সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগেই ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

 

টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি