ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ফেলোশিপ সম্পন্ন করলেন ২৫ তরুণ রাজনীতি
প্রকাশিত : ২১:২০, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আরও বিভিন্ন বিষয়ে দেশে চলমান রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেও রাজনৈতিক ঐক্যের এক ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেলো ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘ইয়াং লিডারস ফেলোশিপ প্রোগ্রামে’। চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের ২৫ জন তরুণ রাজনীতিবিদ এই প্রোগ্রামের আওতায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন, যা রাজনৈতিক সম্প্রীতি ও সহনশীলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে গ্রাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়। চার মাসব্যাপী এই ফেলেশিপের আওতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়নের তরুণ নেতারা এই গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
এফসিডিও’র আর্থিক সহায়তায় ‘বি-স্পেস’ প্রজেক্টের আওতায় উদীয়মান তরুণ রাজনীতিবিদদের নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক তৈরি ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই ফেলোশিপের আয়োজন করে যাচ্ছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।
আয়োজকরা জানান, এবার ফেলোশিপ প্রেগ্রামের ২৫তম ব্যাচের ফেলোরা রাজনৈতিক সম্প্রীতি, সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলসমূহের ভূমিকা, দলীয় অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, ক্যাম্পেইন ম্যানেজমেন্ট, ভোটদান প্রক্রিয়া এবং রাজনীতিতে নারীদের অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেইসঙ্গে তারা জেলা ও মহানগর পর্যায়ে স্থানীয় সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজও করেছেন। তারা সংলাপ, প্রেস কনফারেন্স, প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানের সমাপনীতে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, গণ অধিকার পরিষদের স্থায়ী কমিটির সদস্য খালেদ হোসাইন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনের গভর্ন্যান্স উপদেষ্টা এমা উইন্ড। অতিথরা গ্রাজুয়েটদের সনদ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের ঢাকার মুখপাত্র ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর নার্গিস। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মূখ্য পরিচালক ড. মো. আব্দুল আলীম, সিনিয়র ডিরেক্টর লিপিকা বিশ্বাস ও প্রোগ্রাম অফিসার রামিসা করিম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই প্রোগ্রামে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে যে, সব রাজনৈতিক দল একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে। এভাবে যদি আমরা সামাজিক পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাহলে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য। দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সবার সমান দায়িত্ব রয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব আরও বেশি দৃশ্যমান।
তারা আরও বলেন, এই ফেলোশিপে অংশগ্রহণকারী তরুণরাই অভিষ্যতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবেন। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল যেভাবে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের এক জায়গায় করেছে, একই উদ্দেশ্যে কাজ করতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, এই পরিবেশ যদি দেশের মূলাধারার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সমস্ত বৈষম্য দূর করে একটি উন্নত দেশ গঠন করা সম্ভব। আমাদের দেশের প্রতিটা ইন্সটিটিউটকে গঠন করতে হলে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। দেশ ও জাতীর স্বার্থে এ ধরনের সম্মিলিত উদ্যোগ চলমান থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।
এসময় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ক্যাথেরিন সেসিল গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই ফেলোশিপ থেকে যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আপনারা অর্জন করলেন, তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রির রাজনীতির চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি চিফ অব পার্টি আমিনুল এহসান।
প্রসঙ্গত, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এই ফেলোশিপের আওতায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ৫৮৭ জন তরুণ নেতা ২৫টি ব্যাচে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। যেখানে ৩২৫ জন পুরুষ ও ২৬২ জন নারী ফেলো ছিলেন। এই ফেলোশিপ প্রোগ্রাম ইতিমধ্যে বাংলাদেশের তরুণ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বেশ পরিচিত ও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
এমআর//
আরও পড়ুন










