ঢাকা, রবিবার   ২০ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক

পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাচ্ছে ভিয়েতনাম, ভারত

সুজিত সজীব, ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত : ১২:৪৬, ২০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৩:০৫, ২০ জুলাই ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমদানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত শুল্কছাড় পাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৌশলগত কূটনীতিতে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারাচ্ছে। অন্যদিকে ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাঠামোবদ্ধ আলোচনার মাধ্যমে বড় সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের ‘রিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’ নীতির আওতায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অথচ একই নীতির আওতায় ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ এবং নির্দিষ্ট ট্রান্সশিপড পণ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্লেষকদের মতে ভিয়েতনামের জন্য বড় ধরনের অগ্রগতি।

ভিয়েতনামের কৌশলগত অগ্রগতি

গত জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি প্রথম ধাপে ‘reciprocal tariff’ চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। এতে ৪৬% ট্যারিফ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০% শুল্কে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে ‘trans‑shipment’ পণ্যে ৪০% শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। এর ফলে ভিয়েতনাম তাদের রপ্তানি শিল্পে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। পাশাপাশি, দেশটি ইউএস-মার্কিন পণ্য আমদানিতে শূন্য শুল্ক দিতে সম্মত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি প্রবাহ আরও বাড়িয়েছে। 

ভারতের পরিকল্পনামূলক অবস্থান

ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অ্যাডভান্সড ট্রেড আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনকে ভারত শুল্ক বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি ও জিএম (GM) পণ্যে শুল্ক হ্রাসে সহায়ক হতে পারে। ভারতের লক্ষ্য অনুযায়ী এটি শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান নয়, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত জোটেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপের পথ সুগম করছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে শুল্ক বিষয়ে বাড়তি সুবিধা পাবে ভারত। 

বাংলাদেশের বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতা

মার্কিন মার্কেটে রপ্তানিতে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক এখনও কার্যকর হয়নি। দেশের রপ্তানিকারীরা আশঙ্কা করছেন ১ আগস্ট থেকে সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের ফলে অর্ডার ঘাটতি ও কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিবে। তাদের মতে, তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় চার মিলিয়ন কর্মীর বিশেষ করে নারীরা চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এদিকে এই পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সময়োপযোগী ও কৌশলগত সংলাপে ভিয়েতনাম ও ভারত নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছে। ভারতের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে একাধিক খসড়া চুক্তি তৈরি করেছে, যেখানে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। শুল্ক আরোপের বিষয়ে যে পরিমান কার্যকর ভূমিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়লগুলোর রাখার কথা, তাতে ঘাটতি রয়েছে লে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

তাদের অভিমত, যদি দ্রুততম সময়ে কার্যকর ভূমিকা না নেয়া হয়, তাহলে রপ্তানির ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়বে। এতে পোশাক খাতের প্রচুর কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বেকার হতে পারে লাখ লাখ শ্রমিক। 

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের মতো শ্রমনির্ভর শিল্পে ৩৫% শুল্ক চাপানো অযৌক্তিক। এতে বাজার হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এখনই সময়, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি (FTA বা PTA) আলোচনায় এগিয়ে যেতে হবে। কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় না হলে ভবিষ্যতে রপ্তানি খাত হুমকির মুখে পড়বে।

ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, লক্ষ্যহীন শুল্ক আরোপ আমাদের উৎপাদনে সহায়ক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা ধরে রাখতে কৌশলগত আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে দেশের বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যে ‘কৌশলগত অবস্থান’ই সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। যেখানে ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো তা করতে পারেনি। 

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি