ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সংশয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৩, ৯ এপ্রিল ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছর শেষে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, দেশে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কমেছে, সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও নেতিবাচক। তারপরও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, যা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সোমবার শেরেবাংলা নগর বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০১৮’ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপনকালে সংস্থাটির মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এমন প্রশ্ন তুলে সংশয় প্রকাশ করেন। এসময় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান, জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বের যে কয়টি দেশ প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে, তাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ অথবা রফতানি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুটিই বেড়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা বাংলাদেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির। কমেছে রফতানি আয়। এক্ষেত্রে শুধু ভোগের উপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।যা বিশ্বে একেবারেই ব্যতিক্রম।

উল্লেখ, সম্প্রতি চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিবিএস জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। যা চলতি বাজেটে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি। চলতি বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আগের বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

জাহিদ হোসেন বলেন, তথ্য-উপাত্ত দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবিএসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আসলে এর সমপর্যায়ে কেউ নেই। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ও সংশয় আছে। বিবিএস সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না বিষয়টা এমনটা নয়।

প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন করে তিনি বলেন, এত প্রবৃদ্ধি কি অর্থনীতির সক্ষমতার অতিব্যবহার নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা? এত প্রবৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো প্রমাণ নেই নাকি উৎপাদনশীলতা বেড়েছে? আবার আইনি পরিবর্তন হয়নি, তেলের দামও কমেনি, স্বস্তিবোধের কোনো কারণও নেই।

তিনি আরও বলেন, এটা ব্যতিক্রমী প্রবৃদ্ধি, আগামীতে এই নিয়ে ঝুঁকি দেখা দেবে।জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেইভাবে কর্মসংস্থান বাড়েনি। চলতি বছরে শহরগুলোতে তিন লাখ দরিদ্র বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন যেভাবে হওয়ার কথা তা হয়নি। দারিদ্র্য কমছে ঠিকই, কিন্তু সেই দারিদ্র কমার গতি কমে গেছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ অথবা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আমাদের আয়ের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ। আয় ও কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির চিত্র যদি এমন হয় তবে বছর শেষে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হবে না।

বিশ্ব ব্যাংকের মতে, অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং রাজস্ব ঘাটতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঝুঁকির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের খাত। এই খাতের দুর্নীতি দমনে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য ব্যাংক খাতে তদারকি বাড়াতে হবে। আবার ঋণ আদায়ে আইনগত ও আর্থিক কাঠামোর উন্নতি করতে হবে।

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বৃদ্ধি ও আমানতে কমে যাওয়ায় তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এসব উত্তরণে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাতে ব্যাংকখাতে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং পলিসি ৬ মাস পর পর দেয়ার কথা কিন্ত এখন তারা আগেই দিচ্ছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি। জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতির উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে।

আরকে// এআর

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি