প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ালো এবারের বাজেট, বাড়ছে লিপস্টিকসহ চকলেটের দাম
প্রকাশিত : ২০:২৪, ২ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২০:২৬, ২ জুন ২০২৫

নারীর সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে লিপস্টিক। লিপস্টিক ঠোঁটের পাশাপাশি মুখের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। শখ-সাধ্যের মধ্যে প্রায় সব বয়সী নারীর মেকআপ বক্সে থাকে লিপস্টক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাড়ছে এই প্রসাধনীর দাম। শুধু তাই নয়, প্রেমিকার রাগ-অভিমান ভাঙানো চকলেটের দামও বাড়ছে এবার। বাণিজ্যিক প্রসারের লক্ষ্যে প্রায় দুই শ বছর আগে পরিকল্পিতভাবেই চকলেটের সংযোগ ঘটানো হয় প্রেম-ভালোবাসার সঙ্গে। সময়ের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে চকলেট। কিন্তু মধুর সম্পর্কের দারুণ এই অনুষঙ্গে বাধ সাধছেন বেরসিক অর্থ উপদেষ্টা। এবারের বাজেট শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য চার ডলার থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১০ ডলার। এতে আমদানি করা সব ধরনের চকলেটের দাম বাড়তে পারে।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা শুরু করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় কম।
প্রস্তাবিত বাজেটে বহু পণ্যের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য চার ডলার থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১০ ডলার। ফলে বাড়তে পারে আমদানি করা সব ধরনের চকলেটের দাম। তবে সরবরাহ পর্যায়ে আইসক্রিমের সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হচ্ছে ৫ শতাংশ। এতে দাম কমতে পারে আইসক্রিমের দাম।
এ ছাড়া নারীদের রূপসজ্জার অন্যতম অনুসঙ্গ লিপস্টিক আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে শুল্ক ২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৪০ ডলার। আর এসবের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে প্রেমিকের। স্বামীদেরও গুনতে হবে বাড়তি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম বাজেটে নারীদের খরচ বাড়ানোর এই আয়োজন করেছে। এ জন্য শুল্ককর বাড়াতে হয়নি। কিন্তু যে ন্যূনতম মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হয়, তা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাতে শুল্ক–করও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে এসব উপকরণ আমদানির হিসাব করে প্রথম আলো দেখেছে, নতুন পদক্ষেপের কারণে বছরে সরকারের ৮০০ কোটি টাকার কমবেশি রাজস্ব বাড়তে পারে।
সৌন্দর্যচর্চার এই উপকরণ আমদানির সময় প্রথমে সরকারকে এই রাজস্ব দেন আমদানিকারকেরা। পণ্য বিক্রির সময় তা যুক্ত হবে পণ্যের বিক্রয়মূল্যে। অর্থাৎ বছরে এই ৮০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ বহন করতে হবে ক্রেতাদের।
লিপস্টিকের কথা ধরা যাক। এত দিন এই পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২০ ডলার। মোট শুল্ক–করের হার ১৫৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। তাতে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানিতে শুল্ক–কর দিতে হতো ৩ হাজার ৯১৫ টাকা। বাজেটে ন্যূনতম শুল্কায়ন–মূল্য দ্বিগুণ করে ৪০ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। অর্থাৎ আমদানিকারক ৪০ ডলারের নিচে যত দরেই আমদানি করুক না কেন, ন্যূনতম ৪০ ডলার দরে শুল্কায়ন হবে। এতে প্রতি কেজিতে শুল্ক–কর দিতে হবে প্রায় সাত হাজার ৮৩০ টাকা।
ঠোঁট রাঙানোর আগে লিপ লাইনার ব্যবহার করেন অনেকে। সেখানেও বাড়তি খরচ গুনতে হবে। এত দিন সাধারণ মানের লিপ লাইনার প্রতি কেজি ১০ ডলারে শুল্কায়ন হতো। এখন ন্যূনতম ২০ ডলার দরে শুল্কায়ন করতে হবে। তাতে আগে যেখানে প্রতি কেজি ১ হাজার ৯৫৭ টাকা শুল্ক–কর দিতে হতো, সেখানে এখন তা দিতে হবে দ্বিগুণ।
ঠোঁট রাঙাতে বাড়তি খরচ তো গুনলেন। এবার চোখ ও ভ্রু জোড়া সাজাতে হলে আগেই বাজেট বাড়িয়ে নিন। মাশকারা, শ্যাডো, কাজল—যা–ই কিনবেন, খরচ করতে হবে একটু বেশিই। এত দিন এসব পণ্য আমদানিতে কেজিপ্রতি ন্যূনতম শুল্কায়নমূল্য ছিল ৭ ডলার। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ১০ ডলার করা হয়েছে। তাতে আগে যেখানে কেজিপ্রতি শুল্ক দিতে হতো ১ হাজার ৩৭১ টাকা, এখন দিতে হবে প্রায় দুই হাজার টাকা।
হাত–পায়ের সৌন্দর্যচর্চায়ও বাড়তি খরচ গুনতে হবে। হাতে–পায়ের সৌন্দর্যচর্চার উপকরণ আমদানিতে এত দিন প্রতি কেজিতে শুল্ক–কর দিতে হতো ৯৭৯ টাকা। এখন দিতে হবে ১ হাজার ৯৫৮ টাকা। ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর কারণেই এই বাড়তি খরচ দিতে হবে।
সাজের আগে–পরে মুখ ধোয়ার জন্য দরকার ফেসওয়াশ। এবার বিদেশি ফেসওয়াশেও ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য সাড়ে ৬ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। এত দিন কেজিপ্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা শুল্ককর দিতে হতো। এখন তা বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ২০০ টাকা।
বিদেশি আর যেসব প্রসাধন ব্যবহার করতে হলে ব্যক্তিগত বাজেট বাড়াতে হবে, তা হলো ফাউন্ডেশন, মেক–আপ কিট, রং ফর্সা করার ক্রিম, পাউডার, ময়েশ্চার লোশন ইত্যাদি। এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন–মূল্য প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
মূলত রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার নারীদের সৌন্দর্যচর্চায় হাত দিয়েছে। এনবিআরের হিসাবে দেখা গেছে, গত ১১ মাসে সৌন্দর্যচর্চার ১০ শ্রেণির উপকরণ আমদানি হয়েছে সাড়ে ৪৫ লাখ কেজি। এসব উপকরণের শুল্কায়ন–মূল্য ছিল ৫০০ কোটি টাকা। সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৭৮৯ কোটি টাকা। বছর শেষে তা সাড়ে ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। ন্যূনতম শুল্কায়ন–মূল্য বাড়ানোর কারণে আগামী অর্থবছরে এই খাতে সরকারের রাজস্ব আদায় ৮০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে, যা দিন শেষে গুনতে হবে ক্রেতাদের।
এমবি//
আরও পড়ুন