প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা, পানিবন্দি ৬৪ হাজার পরিবার
প্রকাশিত : ১০:২৮, ১০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১০:৩৩, ১০ জুলাই ২০২৫

ফেনীতে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি গ্রাম। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে আরও এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৬৪ হাজার পরিবার।
বাঁধ ভাঙনের কারণে আমজাদ হাট, কাজিরবাগ, মুন্সিরহাটসহ বহু গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়াও রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এলাকাগুলোতে।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকট। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, ১৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং জরুরি সহায়তা কার্যক্রম চলছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ এখনো অনেকেই পাননি প্রয়োজনীয় ত্রাণ।
দুই উপজেলার কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি, মিটার ও ট্রান্সফরমার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় ৩১ হাজার ২০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ।
তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করছে ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। একাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, পরশুরামের ১২টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ৯টিসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোট ২১টি স্থান ভেঙে গেছে। তার মধ্যে মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর চার জায়গায় ভাঙনে ১০০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত ছয় হাজার ৮২৬ জন অবস্থান করছেন।
ফুলগাজীর বাসিন্দারা জানান, নদীতে পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে তীব্র স্রোতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। গলা সমান পানিতে বের হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বাড়িতে পানিবন্দি থাকলেও কোনো ধরনের খাবার বা প্রশাসনিক সহায়তা পাইনি।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমা বলেন, মাঠপর্যায়ে থেকে দুর্গত মানুষের সহায়তায় আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছি। উপজেলায় ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।
এ ব্যাপারে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাত হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রায় ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০১টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ৫০০ টন চাল, ২৭৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া নগদ ১৮ লাখ টাকা রয়েছে। জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এএইচ
আরও পড়ুন