ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বেলারুশের ওপর ইইউর বিমান নিষেধাজ্ঞা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩৪, ২৫ মে ২০২১

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপের আকাশে বেলারুশিয়ান এয়ারলাইন্স-এর বিমান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বেলারুশের ভিন্নমতাবলম্বী একজন সাংবাদিককে বহনকারী একটি বিমানকে হুমকির কথা বলে তার গতিপথ বদলে মিনস্কের বিমানবন্দরে রবিবার অবতরণ করতে বাধ্য করেছিল বেলারুশ।

ব্রাসেলসে একটি বৈঠকে ইইউর ২৭টি সদস্য দেশের নেতারা ইইউ-র এয়ারলাইন্সগুলোরও বেলারুশের আকাশ বর্জনের কথা বলেছেন এবং এর বাইরেও অন্যান্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী রায়ানএয়ারের একটি বিমানে ছিলেন বেলারুশের সাংবাদিক এবং আন্দোলনকর্মী রোমান প্রোতাসেভিচ। বোমা হামলার হুমকি দিয়ে বিমানটিকে তার গতিপথ পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়।

পশ্চিমা দেশগুলো বেলারুশের বিরুদ্ধে রায়ানএয়ারের বিমানটি 'ছিনতাই'-এর অভিযোগ করেছে। বেলারুশ কর্তৃপক্ষ সোমবার প্রোতাসেভিচের যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তা দেখে মনে হচ্ছে সেটি মিনস্ক বিমানবন্দরে আটক করার পর তাকে চাপ দিয়ে রেকর্ড করা হয়েছে।

ওই রেকর্ডিংএ সাংবাদিক প্রোতাসেভিচ বলেছেন তিনি সুস্থ আছেন এবং বেলারুশ তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করেছে তিনি সেই অপরাধ স্বীকার করেছেন।

তবে দেশটির প্রধান বিরোধী নেতাসহ অন্যান্য আন্দোলনকারীরা এই ভিডিওর সমালোচনা করেছে এবং বলেছেন প্রোতাসেভিচকে চাপ দিয়ে এই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেলারুশ কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে "জঘন্য" বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, "এটা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক ভিন্ন মতের প্রতি নির্লজ্জ আক্রমণ"।

প্রোতাসেভিচের বাবা দিমিত্রি প্রোতাসেভিচ বলেছেন তার ছেলেকে নির্যাতন করা হয়ে থাকতে পারে বলে তার আশঙ্কা।

তিনি বলেছেন, তার ছেলেকে বেলারুশে আটকে রেখে টেলিভিশনে এই স্বীকারোক্তি দিতে স্পষ্টতই বাধ্য করা হয়েছে। তার শরীরে মারধরের চিহ্ণ রয়েছে।

দিমিত্রি প্রোতাসেভিচ বলেছেন তার ছেলের শরীরে আঘাত দেখা যাচ্ছে এবং তার নাক ভাঙা দেখাচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন তার ছেলের কথা এবং কথার ভঙ্গি অস্বাভাবিক শোনাচ্ছে।

ফিল্ম করা বিবৃতিতে সাংবাদিক স্বীকার করেছেন গত বছর প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে তিনি উস্কানি দিয়েছিলেন এবং বলেছেন তার সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হচ্ছে।

সাংবাদিকের প্রেমিকা সোফিয়া সাপেগা গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়া ওই বিমানযাত্রায় রোমান প্রোতাসেভিচের সাথেই ছিলেন। তাকেও বেলারুশে আটক রাখা হয়েছে।

সোমবার দিমিত্রি প্রোতাসেভিচ বলেন তার ছেলের সাথে বেলারুশে কী ধরনের আচরণ করা হবে তা নিয়ে তিনি "সত্যিই ভীত।"

"আশা করি সে সামলাতে পারবে। আমরা চিন্তা করেও শঙ্কিত হচ্ছি। তাকে মারধর এবং অত্যাচার করা খুবই সম্ভব। আমরা খুব ভয় পাচ্ছি, আমরা খুব ভেঙে পড়েছি," তিনি এক ভিডিও কলে বলেন।

"ইউরোপের বুকে একবিংশ শতাব্দীতে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না। আমরা আশা করছি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেলারুশ কর্তৃপক্ষের ওপর নজিরবিহীন চাপ প্রয়োগ করবে। আশা করব সেই চাপ কাজ করবে এবং তারা বুঝতে পারবে যে তারা আসলেই একটা বিশাল ভুল করেছে," বলেন দিমিত্রি প্রোতাসেভিচ।

ইউরোপের প্রধান বিমান সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই বেলারুশের আকাশসীমার ভেতর তাদের বিমান চালানো বন্ধ করতে শুরু করেছে। তারা তাদের ফ্লাইটের রুট ইতোমধ্যেই বদলে দিয়েছে।

ব্রিটেন বেলারুশের রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বেলাভিয়ার যুক্তরাজ্যে বিমান চলাচলের পারমিট স্থগিত করে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার সদস্যদেশগুলোকে একই ধরনের পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানিয়েছে।

পোল্যান্ড ঘোষণা করেছে তাদের জাতীয় এয়ারলাইন্স এলওটির কোন বিমান বেলারুশের আকাশে চলাচল করবে না। ইউক্রেনও ঘোষণা করেছে আগামীকাল মধ্যরাত থেকে বেলারুশের সাথে তাদের সব বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে।

রোমান প্রোতাসেভিচ কে?

প্রোতাসেভিচ নেকস্টা নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের সাবেক সম্পাদক। নেকস্টার একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল আছে।

তিনি ২০১৯ সালে বেলারুশ ছেড়ে চলে যান এবং লিথুয়ানিয়ায় নির্বাসনে থাকছিলেন। সেখান থেকে তিনি বেলারুশের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশ করতেন। এর পর তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ এবং দাঙ্গায় উস্কানি দেবার অভিযোগ আনা হয়।

নির্বাচনের সময় নেকস্টা বেলারুশে সরকার-বিরোধী পক্ষের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্বাচনে লুকাশেঙ্কো বিজয়ী হন, যদিও ব্যাপকভাবে অভিযোগ আনা হয় ওই নির্বাচনে তিনি কারচুপি করেছেন।

নেকস্টা পরবর্তীতেও এই অভিযোগ অব্যাহতভাবে প্রচার করে, বিশেষ করে বেলারুশ সরকারের সংবাদ প্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ জারির পর।

প্রোতাসেভিচ বর্তমানে আরেকটি টেলিগ্রাম চ্যানেলের জন্য কাজ করেন যার নাম বেলামোভা। গত বছর জুন মাসে বেলারুশ কর্তৃপক্ষ বেলামোভার ব্লগার ইগর লসিককে গ্রেপ্তার করার পর রোমান প্রোতাসেভিচ তার জায়গায় লেখার দায়িত্ব নেন।

বেলারুশ সম্পর্কে তথ্য
বেলারুশ কোথায়? বেলারুশের পূবে রয়েছে তার মিত্র দেশ রাশিয়া আর দক্ষিণে ইউক্রেন। উত্তর ও পশ্চিমে ইইউ এবং নেটোর সদস্য তিনটি দেশ লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া আর পোল্যান্ড।

কেন গুরুত্বপূর্ণ? ইউক্রেনের মতই বেলারুশের ৯৫ লাখ মানুষ পশ্চিমা দেশগুলো ও রাশিয়ার মধ্যে বৈরিতার জাঁতাকলের শিকার। দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার লুকাশেঙ্কোকে বর্ণনা করা হয় "ইউরোপের সবশেষ স্বৈরশাসক" বলে এবং তিনি ক্ষমতায় আছেন ২৭ বছর।

সেখানে কী ঘটছে? দেশটিতে নতুন, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের সরকার-বিরোধী আন্দোলন চলছে। বিরোধী আন্দোলনকারী এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সরকাররা বলছে লুকাশেঙ্কো গত বছর ৯ই অগাস্টের নির্বাচনে কারচুপি করেছেন। সরকারিভাবে তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হন। এরপর পুলিশ কঠোর হাতে রাস্তায় বিক্ষোভ দমন করে এবং বিরোধী নেতাদের হয় জেলে নয় নির্বাসনে পাঠায়। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি