ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ‘হাঁটু কি এখন দুর্বল’?

প্রকাশিত : ২২:১৮, ১০ এপ্রিল ২০১৯

ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও তারা এখন শাসক দলের অনুগত প্রতিষ্ঠানের মতোই আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন সে দেশের একদল সাবেক শীর্ষস্থানীয় আমলা।

রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে তারা বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়ে দাবি করেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের `হাঁটু এখন দুর্বল` হয়ে পড়েছে - নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তাদের নেই।

যে ৬৬জন এই চিঠিতে সই করেছেন তার মধ্যে ভারতের বহু প্রাক্তন সচিব, রাষ্ট্রদূত, পুলিশ-প্রধান বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা রয়েছেন।

আর তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, কমিশনের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব আর মেরুদন্ডহীনতাই তাদের এ চিঠি লিখতে বাধ্য করেছে।

গত সত্তর বছরে ধরে ভারতে গণতন্ত্রর চর্চায় নির্বাচন কমিশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।

বিশেষত সুকুমার সেন, টি এন শেষন বা জে এম লিংডোর মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনাররা এই প্রতিষ্ঠানকে একটা আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে গেছেন।

কিন্তু এখন সেই নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলেই মনে করছেন ভারতের একদল সাবেক শীর্ষস্থানীয় আমলা - যাদের অন্যতম হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেন।

তিনি বলছিলেন, "আমরা দেখলাম একটা রাজ্যের রাজপাল একটা দলের হয়ে প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন। আমরা দেখলাম এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে `মোদীজির সেনা` বলে বর্ণনা করছেন।"

"আমরা আরও দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী নাটকীয়ভাবে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট পরীক্ষার কথা ঘোষণা করলেন, যেটা নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ার তার করা একেবারেই উচিত হয়নি।"

"এভাবে পরপর অনেকগুলো ঘটনার পর আমরা মনে করেছি, এর একটা প্রতিবাদ হওয়া দরকার।"

"কারণ নির্বাচন কমিশন যদি এরপরও কঠোর ব্যবস্থা না-নেয় তাহলে তো সবাই ভাববে এরা চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে", বলছিলেন অর্ধেন্দু সেন।

নির্বাচন কমিশন মানুষের আস্থার জায়গাটা হারিয়ে ফেললে সেটা যে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য চরম ক্ষতি, চিঠিতে সে কথাও লিখেছেন তারা।

আর এই গোটা সমস্যার মূলে আছে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের প্রক্রিয়াটাই, মনে করছেন চিঠির অন্যতম স্বাক্ষরকারী ও ভারত সরকারের সাবেক পরিবহন সচিব টুকটুক কুমার।

ড: কুমার বলছিলেন, "নির্বাচন কমিশন এত কমজোর হয়ে পড়েছে, কারণ সরকার কমিশনারদের নির্বাচন করছে বেছে বেছে - আর তারাও রাজনৈতিক প্রভুদের অনুগত হয়েই থাকছেন।"

"তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করার ক্ষমতাই যেন কমিশনের নেই।"

"শাসক দলের প্রতি কমিশনাররা একটু নরম মনোভাব বরাবরই দেখাতেন, কিন্তু এখন যেন সেই প্রবণতা চক্ষুলজ্জারও সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।"

"আর পুরস্কার হিসেবে, অবসরের পরই একদিনও অপেক্ষা না-করেই তারা লোভনীয় অ্যাসাইনমেন্টও পেয়ে যাচ্ছেন!"

মহারাষ্ট্রের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মীরন বোরওয়ানকরও রাষ্ট্রপতিকে লেখা ওই চিঠিতে সই করেছেন।

তিনি মনে করছেন, তাদের প্রতিবাদে যে কাজ হচ্ছে তার প্রমাণ হলো: কমিশন আজ বুধবার নরেন্দ্র মোদীর ওপর নির্মিত বায়োপিকের মুক্তি আটকে দিয়েছে।

কিন্তু একই সঙ্গে তার আক্ষেপ, "মোদীকে নিয়ে তৈরি ওয়েব সিরিজ বা তার নামাঙ্কিত নমো টিভির সম্প্রচার কিন্তু এই কমিশন ঠেকাতে পারেনি।"

"ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের পাশাপাশি ভিভিপ্যাটের (ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) ব্যবহার নিয়েও নির্বাচন কমিশন আমাদের বিভ্রান্ত করেছে।"

"তারা বলেছে, ভিভিপ্যাট বেশি ব্যবহার করলে ফল গণনায় না কি তিন-চারদিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে, যে কথা মোটেও ঠিক নয়!"

"ফলে যখন একদিন ইতিহাস লেখা হবে, তখন এই কমিশন সম্বন্ধে কী আর লেখা হবে? মানুষ তো সবই দেখছেন!", বলছিলেন মিস বোরওয়ানকর।

দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক নলিনী সিং আবার বলছিলেন, রাজস্থানের রাজ্যপাল কল্যাণ সিংয়ের বিজেপির হয়ে ভোটের প্রচার করার ঘটনায় তীব্র আপত্তি জানিয়ে কমিশন যেভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি `রেফার` করেছে - তাতে তিনি খুশি।

"কারণ অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশন সাংবিধানিক পদে থাকে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারে সাহস দেখিয়েছে।"

কিন্তু ঘটনা হল, ভারতে নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে এই ধরনের পদক্ষেপ খুবই বিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে - আর সে কারণেই এবারের ভোটে তাদের ভূমিকা নিয়ে এত প্রশ্ন। বিবিসি বাংলা

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি