ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৩ মে ২০২৫

মানুষ যেন মানুষের পাশে দাঁড়ায়: তসলিমা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১১, ১৬ জুলাই ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন নিয়ে সরকারকে দুষলেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। পাশাপাশি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে হেয় করেছেন তিনি। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

নিউইয়র্কের বাঙালি হিন্দুদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম দু`দিন আগে। রাতের খাবার খাওয়ার নিমন্ত্রণ। ইউরোপ আমেরিকায় বাঙালি হিন্দু দু`রকমের- পশ্চিমবঙ্গের আর বাংলাদেশের। এই দুই অঞ্চলের হিন্দুদের মধ্যে বন্ধুত্ব কমই হয়।

শ্রেণি তফাতের কারণেই মূলত এমনটা হয়। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা তুলনায় অবস্থাপন্ন- পেশায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর...। বাংলাদেশের হিন্দুরা অধিকাংশই শ্রমিক শ্রেণির। বাংলাদেশের হিন্দুরা মিশতে চাইলেও পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা তাদের সঙ্গে মিশতে চান না। কিন্তু সেদিনের নিমন্ত্রণে দুই অঞ্চলের বাঙালিই ছিলেন। পরস্পরকে ভালোবেসে ছিলেন, তা কিন্তু নয়।

তথাগত রায় বিজেপি নেতা, এখন ত্রিপুরা রাজ্যের গভর্নর, তাকেও ডিবেট আর ডিনারের জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তিনি ভালো বক্তা। তিনি বললেন, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুদের লড়তে হবে বাংলাদেশের `নির্যাতিত` হিন্দুদের জন্য। এ ছাড়া বাংলাদেশের হিন্দুদের দুর্দশা ঘোচানোর আর কোনও পথ নেই। মারাঠী হিন্দু, তেলুগু হিন্দু, রাজস্থানী হিন্দু, বিহারি হিন্দু, পাঞ্জাবি হিন্দু, কন্নড় হিন্দু, -- কেউ বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দুদের দুঃখ ততটা অনুভব করবেন না, যতটা অনুভব করবেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুরা। কারণ তারাই তাদের কাজিন। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুরা বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন করলে ভারত সরকার চাপ সৃষ্টি করবেন বাংলাদেশের সরকারের ওপর। এতেই হবে সমস্যার সমাধান।

আমি প্রতিবাদ করেছি। বলেছি, বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হয়, তাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়, তাদের মন্দির ভেঙ্গে ফেলা হয়, এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের। সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের নাগরিক। ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের সরকারের। অথচ হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিলেও ধর্মান্ধ জিহাদিদের বিরুদ্ধে এ সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল লেখক প্রকাশক ব্লগারদের এক এক করে খুন করে ফেললেও ধর্মান্ধ জিহাদিদের বিরুদ্ধে এ সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই সরকার বরং ধর্মান্ধদের নিয়ে ওলামা লীগ নামে একটি দল তৈরি করেছেন। মসজিদ-মাদ্রাসার আর প্রয়োজন না হলেও দেশ ছেয়ে ফেলছেন মসজিদ মাদ্রাসা বানিয়ে। হিন্দুদের ঘৃণা করার জন্য, নির্যাতন করার জন্য, ওদের মেরে ফেলার জন্য, ওদের মন্দিরের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য, জিহাদ করার জন্য দিন রাত মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করছেন অগণিত পীর হুজুর। সবকিছু জানার পরও এদের ওয়াজ বন্ধ করার কোনও ব্যবস্থা সরকার আজও নেয়নি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে খুব পছন্দ ভারতের। দু` চারজন যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে ফাঁসিতে চড়িয়েছেন বলে হাসিনাকে মৌলবাদবিরোধী শক্তি বলে ভাবার কোনও কারণ নেই। হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা বাংলাদেশের কোনও সরকার করেনি, হাসিনাও করেননি। কিন্তু করতে হবে।

দেশের মানুষ যারা গণতন্ত্রে, মানবাধিকারে, ধর্মনিরপেক্ষতায়, অসাম্প্রদায়িকতায়, বাক স্বাধীনতায়, মানবতায় বিশ্বাস করেন, তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে সমাজ বদলাবার, রাষ্ট্রধর্মকে বিদেয় করার, সংবিধানকে সেক্যুলার করার। প্রগতিশীল মানুষের সংখ্যা বাড়লেই হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

তথাগত রায়ের মূল বক্তব্য, হিন্দুদেরকে হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমার বক্তব্য, হিন্দুকে হিন্দুর পাশে, মুসলমানকে মুসলমানের পাশে, ইহুদিকে ইহুদির পাশে, খ্রিস্টানকে খ্রিস্টানের পাশে দাঁড়াতে হবে-- এ বড় সাম্প্রদায়িক ভাবনা। আমি হিন্দু নই, হিন্দু ধর্মে আমি বিশ্বাস করি না, কিন্তু নির্যাতিত হিন্দুদের পাশে আমি দাঁড়াই। নির্যাতিত মুসলমান, নির্যাতিত ইহুদি খ্রিস্টান বৌদ্ধর পাশে দাঁড়াই। আসলে, মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষ যেন মানুষের পাশে দাঁড়ায়- এমন সমাজই আমাদের তৈরি করতে হবে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি