ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

যে দেশের প্রেসিডেন্টকে বলা হয় ‘জীবন্ত লাশ’!

প্রকাশিত : ১১:০১, ৬ মার্চ ২০১৯

আলজেরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিজের পঞ্চম মেয়াদের জন্য নির্বাচন করছেন। অথচ প্রেসিডেন্ট আব্দেল আজিজ বুতেফলিকাকে তার সমালোচকরা বলেন ‘জীবন্মৃত’।

আব্দেল আজিজ বুতেফলিকার বয়স এখন ৮২ বছর কিন্তু তিনি অবসর গ্রহণে ইচ্ছুক নন। যদিও ২০১৩ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি কার্যত পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

এরপর থেকেই তাকে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পঞ্চম মেয়াদের জন্য নির্বাচন করছেন তিনি।

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের মতে ১৮ই এপ্রিলের ভোটে তিনি জিতেও যেতে পারেন। যদিও ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর শাসনক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে অনেক।

সারাদেশে লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে তরুণরা শুক্রবারও রাস্তায় নেমে এসেছিলো অসুস্থ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিতে।

আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর এটাকেই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বলে মনে করা হচ্ছে এবং রাজধানী আলজিয়ার্সে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়েছে।

যদিও তাদের এসব প্রতিবাদ প্রেসিডেন্ট বুতেফলিকার কানে যায়নি। তিনি প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেননি কারণ তিন সুইজারল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আব্দেল আজিজ বুতেফলিকার চরম সমালোচকরা তাকে `দ্য লিভিং ডেড` বা জীবন্ত লাশ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

উত্তর আফ্রিকা বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা মাস বলেন বিরোধীরা তাকে ‘দা ফ্রেম`ও বলে থাকেন। কারণ অসুস্থতা ও কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারা। এমনকি প্রার্থিতা ঘোষণার দিনসহ অনেক অনুষ্ঠানেই তার বাধাই করা ছবি রাখা হয়েছিলো তার নিজের উপস্থিতির পরিবর্তে।

‘এমনকি তার অবস্থা নিয়ে এতোই অনিশ্চয়তা যে গত সোমবার প্যারিসে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে একটি বিবৃতি দিতে হয়েছিলো যে প্রেসিডেন্ট এখনো জীবিত আছেন।’

আলজেরিয়াকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রবলা হলেও দেশটি পরিচালিত হয় আসলে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা অনুযায়ী। একদল সামরিক কর্মকর্তা আর অনির্বাচিত ব্যবসায়ীরা দেশ চালানোর ক্ষেত্রে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং তারাই রাজত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যখন অসুস্থ প্রেসিডেন্ট অবস্থান নিয়ে আছেন এক কোনায়।

সাংবাদিক মার্ক মারজাইনদাস আলজেরিয়ায় বসবাস ও কাজ করতেন ৯০`এর দশকে। তার মতে, ‘৯০ এর দশকে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে উত্থান হয়েছিলো প্রেসিডেন্ট বুতেফলিকার। এরপর থেকেই ক্ষমতা আসলে রাজনীতিক ও সামরিক একটি যৌথ মাফিয়া চক্রের কাছে।’

তারাই এরপর মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হয়। আজকের আলজেরিয়াকে বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে ৯০ এর দশকে কি ঘটেছিলো সেদিকে। দেশটি দীর্ঘ যুদ্ধের পর ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিলো।

এরপর ভঙ্গুর গণতন্ত্রের পথ দরে ইসলামপন্থীরা ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হলে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করে। এরপর গৃহযুদ্ধে এক দশকে প্রায় দু লাখ মানুষ নিহত হয়। সাংবাদিক মার্ক মারজাইনদাসের মতে সেটি ছিলো আলজেরিয়ার সবচেয়ে অন্ধকার সময়।

পরে ১৯৯৯ সালে আব্দেল আজিজ বুতেফলিকা ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু এখন তিনি দুর্বল, আর এ সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নানা দল ও উপদল।অন্যদিকে তার পুন:নির্বাচনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে তরুণরা।

তারা শ্লোগান দিচ্ছে `বাই বাই বুতেফলিকা`। স্থানীয় মিডিয়ার মতে গত ত্রিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে যার নেতৃত্বে আসলে ছাত্র ও বিভিন্ন খাতের তরুণরা।

বয়সে তরুণ এ দেশটির জনসংখ্যা চার কোটির সামান্য বেশি। এর মধ্যেই রোববার রাতে প্রেসিডেন্টের একটি চিঠি পড়ে শোনানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

যেখানে তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদকারীদের গভীর কান্না আমি শুনেছি।’ তিনি তাই অঙ্গীকার করেন যে পুননির্বাচিত হলে রাজনৈতিক সংস্কার ও আরেকটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের জন্য তিনি একটি কনফারেন্সের আয়োজন করবেন। যদিও নতুন প্রজন্মের কাছে এ ধরনের ভারী কথাবার্তার কতটা মূল্য আছে সেটি সময়ই বলে দেবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি