রিটকারী ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি, পরে ক্ষমা প্রার্থনা
প্রকাশিত : ১১:৪৬, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৫৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনকারী ছাত্রী বি এম ফাহমিদা আলমকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দিয়ে একটি বিতর্কিত পোস্ট করেছেন ঢাবির এক শিক্ষার্থী। যদিও তীব্র সমালোচনার মুখে ওই শিক্ষার্থী ভিডিওবার্তায় ক্ষমা চান।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশের পর আলী হোসেন নামের ওই শিক্ষার্থী ফাহমিদাকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
হুমকিদাতা শিক্ষার্থী আলী হোসেন ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে ‘গণধর্ষণের’ পদযাত্রা করা উচিত।
তিনি আরও লেখেন, ‘কেউ এসব শব্দচয়ন দেখে সুশীল হইয়েন না, যে একে সাপোর্ট করবে ওপরের কথা তার জন্যও প্রযোজ্য।’
স্ট্যাটাসের পরপরই সেই শিক্ষার্থী শিবিরের সঙ্গে জড়িত নিয়ে আলোচনা শুরু হলে পোস্টটি ডিলিট করে দেন ওই শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তীব্র সমালোচনার মুখে ওই শিক্ষার্থী ভিডিওবার্তায় ক্ষমা চান।
হুমকি পাওয়া বি এম ফাহমিদা আলম বামপন্থী ৩টি ছাত্র সংগঠন (সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিসিএল) সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই বক্তব্যের জন্য আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, রিট করার জন্য তাঁকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অধিকার আলী হোসেনের নেই। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সামিনা লুৎফা লিখেছেন, ‘তবে সেটাও হতে হবে ডিউ প্রসেসে (যথাযথ প্রক্রিয়ায়)। এটা সুশীলগিরি হলে আমি সুশীল! লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার!’
পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘নিজের ছাত্রকে নিয়ে আর কী লিখব। সে সুশীলগিরি দেখাতে না করেছে, সেই সুশীলগিরিই দেখাইলাম। সে বলেছে (ওই ছাত্রীকে) যে সাপোর্ট করবে, তাদের জন্যও সে একই দাওয়াই প্রস্তাব করছে। যাঁরা আলী হোসেনের মতামতে বিশ্বাস করেন এবং সমাজবিজ্ঞান পড়েও মনে করেন যেকোনো মানুষকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া যায় অকাতরে, তাঁরা আর আমার ক্লাসে বসার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাদের পড়াব না।’
আলী হোসেনের ফেসবুক পোস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক ও ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের ফেসবুকে লিখেছেন, রিটকারী নারী প্রার্থীকে লিগ্যালি এবং পলিটিক্যালি ডিল না করে তাকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার মতো জঘন্য কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে দেওয়া হবে না।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের মানসুরা আলাম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ফাহমিদা আলমকে গণধর্ষণের হুমকিদাতা আলী হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতা। সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, ২০-২১ সেশন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ জেলা গোয়াইনঘাট, সিলেট। শুধুমাত্র মতের ভিন্নতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন শিবির নেতা গণধর্ষণের পদযাত্রা করতে চায়। এদের চরিত্র বের হয়ে আসছে।’
এ বিষয়ে ডাকসুর জিএস প্রার্থী ও ঢাবি সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এসেছে, সে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত নয়। যারা এটার সঙ্গে জড়িয়ে ছাত্রশিবির নিয়ে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন তিনি।
পরে রাতে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে প্রক্টরের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন শিবিরের জি এস প্রার্থী ফরহাদ।
তিনি আরও লিখেছেন, রাজনৈতিক এবং আদর্শিক মতবিরোধ থাকবে। কিন্তু সেটাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে কাউকে আক্রমণ করা বা ধর্ষণের হুমকি দেওয়া জঘন্য অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ থাকবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেচনাশীল শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচনে এমন কাউকে ভোট দেবেন না, যারা নারীর প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে।
এএইচ
আরও পড়ুন