ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪

রোহিঙ্গা গণহত্যা: সু চি’র বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৯, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৪২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি গতকাল বুধবার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দেশের সেনাবাহীনির সাফাই গেয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস বর্ণনা করে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর ও এজেন্ট সু চি সাম্প্রতিক রাখাইনের ঘটনাগুলোকে সংঘাতের ফল হিসেবে অভিহিত করেন।

আন্তর্জাতিক আদালতে এ বিষয়ে শুনানি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের উপরে গণহত্যা চালিয়েছে। যার উদ্দেশ্য ছিল একটি জাতিকে নির্মূল করে দেয়া। তবে এটি ঠেকাতে বা পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে সু চি। তিনি নিজেও সেনাবাহীর হাতে দীর্ঘসময় নিগৃহীত হয়েছেন; এখন তিনি আবার মিয়ানমানের সেবাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন এটা দুঃখজনক।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতকে নেপথ্যে সহায়তা করছে কিন্তু তারা চায় দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করা যাবে।

আইন বিশেষজ্ঞ আর সাবেক কূটনীতিকদের মতে, সু চি’র এ বক্তব্য ধোপে টিকবে না। ভয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বক্তব্যটিও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা বলে মনে করেন তারা।

এছাড়া, রাখাইনে গণহত্যা হয়নি আন্তর্জাতিক আদালতে অং সান সু চি’র এমন বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, এটা সু চি’র দায় এড়ানোর অপচেষ্টা।

রোহিঙ্গারা বলছেন, আমাদের উপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা সারা বিশ্ব দেখেছে। এসব প্রমাণ এখনও হারিয়ে যায়নি। গণহত্যার জন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে। রোহিঙ্গা নেতারা মনে করেন, সু চি দায়মুক্তির জন্য এমন অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন অথবা তিনি রাখাইনের বাস্তব অবস্থা জানেন না। তাদের কাছে যে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে তা গণহত্যা প্রমাণে যথেষ্ট।

এদিকে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের অপরাধ চিহ্নিত হবে এবং তাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার বিচার হবে। তারপরই তারা ন্যায্য অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার আইসিজেতে ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে মিয়ানমার সেনাবাহীনির বিরুদ্ধে আনীত গণহত্যার অভিযোগের প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন আদালতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির উপস্থিতিতে অভিযোগকারী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু মানবতাবিরোধী নৃশংসতার অভিযোগগুলোর সারাংশ তুলে ধরেন।

গণহত্যার উদ্দেশ্য, গণহত্যার কার্যক্রম, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা, গাম্বিয়া এবং মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির পটভূমি, আদালতের এখতিয়ার এবং অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী কী ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেগুলো গাম্বিয়ার পক্ষে আদালতে তুলে ধরেন আরও সাত আইন বিশেষজ্ঞ।

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গাম্বিয়া যেসব অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ রাখা, গণহত্যার কোনও আলামত নষ্ট না করা, জাতিসংঘের তদন্তকারীসহ অন্যদের আরাকানে ধ্বংসপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অবাধে প্রবেশাধিকার দেওয়া।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি তল্লাশি চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিধন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ওই ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর গত ১১ নভেম্বর অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সমর্থনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করে গাম্বিয়া। দি হেগের আদালতে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই মামলার শুনানির শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার।

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি