ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্মী সেনাদের বইয়ে ভুয়া তথ্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩০, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রকাশিত একটি বইয়ে পুরনো সাদা-কালো একটি ঝাপসা ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক লোক কৃষিকাজে ব্যবহৃত নিড়ানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই লাশের পাশে। ছবিটির ক্যাপশানে বলা হয়েছে- ‘স্থানীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করেছে বাঙালিরা’।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লেখা নতুন একটি বইয়ে এ ছবি ছাপা হয়েছে। ওই বইয়ে থাকা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও তথ্য ভুয়া, যা ধরা পড়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানে।

ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে বইটির ১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারের দাঙ্গার অধ্যায়ে। বর্মি ভাষায় ছবির বিবরণে বলা হয়েছে, বৌদ্ধদের রোহিঙ্গারা হত্যা করছেন। বইটিতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের অবৈধ অভিবাসী বোঝাতে বাঙালি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কিন্তু খোঁজ করতে গিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স দেখেছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছবিটি তোলা। তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী লাখ লাখ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিল।

গত জুলাইয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার’ থেকে প্রকাশিত ওই বইয়ে এরকম তিনটি ভুয়া ছবি পাওয়া গেছে, যেগুলো রাখাইন অঞ্চলের আর্কাইভ ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। কার্যত রয়টার্স দেখেছে, দুটি ছবি মূলত বাংলাদেশ ও তানজেনিয়ায় তোলা হয়েছিল।

মিয়ানমার ছেড়ে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের আরেকটি ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।

এ সব ছবির বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হাতোই বা সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বক্তব্য রয়টার্স জানতে পারেনি। মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ মায়ো মিন্ট মং মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বলেছেন, ওই বই তিনি পড়ে দেখেননি। মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের সব বইয়ের দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে সেনাবাহিনী প্রকাশিত বইটি।

‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী: প্রথম পর্ব’ নামে ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে গত বছরের অগাস্টের পর শুরু হওয়া সামরিক অভিযান নিয়ে সেনাবাহিনীর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বর্মী সেনাদের বইয়ে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস খোঁজারও একটি চেষ্টা করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা নিজেদের রাখাইনের স্থানীয় বাসিন্দা বলে দাবি করে এলেও ওই বইয়ে তাদের দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। বইয়ের মুখবন্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল চিয়াও চিয়াও ও লিখেছেন, রাখাইনে ‘বাঙালিদের ইতিহাস প্রকাশ্যে আনতেই’ তারা ‘প্রামাণ্য ছবিসহ’ এই সংকলনটি করা হয়েছে।

ঝাপসা হয়ে আসা একটি সাদা-কালো ছবিতে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ গাট্টি বোচকা নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে কোথাও যাচ্ছে। তার ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মিয়ানমারের দক্ষিণ অংশ দখল করে নেওয়ার পর বাঙালিরা এ দেশে প্রবেশ করে।’ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বোঝাতে চেয়েছে, ওই ছবি ১৯৪৮ সালের আগের, মিয়ানমারের কোনও এলাকার। কিন্তু রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডায় তোলা একটি রঙিন ছবিকে বিকৃত করেই সেনাবাহিনীর বইয়ের ওই ছবি তৈরি হয়েছে।

সাদা কালো আরেকটি ছবিতে দেখা যায় বেহাল চেহারার একটি নৌকা বোঝাই মানুষ। তাতে ক্যাপশন- ‘সাগর পথে মিয়ানমারে ঢুকছে বাঙালিরা।’ আসলে ওই ছবিটি তোলা হয় ২০১৫ সালে ইয়াঙ্গনে। ওই সময় লাখ লাখ মানুষ নৌকায় করে সাগরপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছিলেন। বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বহনকারী এরকমই একটি নৌকা সে সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। আসল ছবিটি উল্টে দিয়ে সেটি সাদা-কালো আর ঝাপসা করে ব্যবহার করা হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বইয়ে, যাতে ছবিটি অনেক পুরনো মনে হয়।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা উসকে দেওয়ার অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তাদের ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া একই দিন গণহত্যার উদ্দেশ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে ব্যাপক হত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা তাদের প্রতিবেদনে অভিযোগ করেন। এতে দেশটির সেনাপ্রধানসহ ছয় সামরিক কর্মকর্তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করার সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার জবাবে সেনাবাহিনী নির্মম দমন অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘ বলছে, সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে দশ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ আর নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

সূত্র: রয়টার্স

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি