ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

জাতিসংঘ মহাসচিব

রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতেই যৌন সহিংসতা চালানো হয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪২, ১৫ এপ্রিল ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

হামলা-নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা নতুন সাত লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে অসংখ্য নারী মিয়ানমারের সেনাসদস্যদের যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের ওপর যৌন সহিংসা চালানো হয় এই উদ্দেশ্যে যে, তারা দেশে দেশ ছেড়ে চলে যান এবং আর না ফেরে। জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকার এই তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগামীকাল সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সংস্থাটির এ প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

এতে বলা হয়েছে, শরণার্থী হয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা নারীই ‘বর্বর যৌন নিপীড়নের তীব্র শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপ বয়ে বেড়াচ্ছেন’।

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের আগস্ট সময়কারে রাখাইনের যে ‘জাতিগত নিধন’ চালানো হয়েছে, সে সময়কার যৌন নিপীড়িনের ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের স্থানীয় সশস্ত্র সমর্থকরাও যোগ দেয়।

‘যৌন নিপীড়ন করা এবং এর জন্য চূড়ান্ত ভীতি প্রদর্শন দুটোই অবিচ্ছেদ্য। রোহিঙ্গাদের ওপর এই সন্ত্রাসে এবং যৌন নিগ্রহ চালানো হয়েছে মূলত তাদের নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য এবং পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবসান ঠেকানোর জন্যও,’ যোগ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

প্রসঙ্গত,রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশের নাগরিক মনে করে না মিয়ানমার সরকার। তারা মনে করে রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে থেকে তাদের দেশে গিয়েছে। তাই বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা ও নিধন চালিয়ে আসছে মিয়ানমার সেনারা।

এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুদ্ধি অভিযানের নামে রাখাইন রাজ্যে মূলত জাতিগত নিধন চালানো হয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘সেইসব নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা গর্ভবতী হয়েছেন, যাঁরা জাতিগত পরিচয় বহন করেন। এই জাতিগত পরিচয়ের উত্তরাধিকার বহন করবে যারা, সেসব শিশুর ওপরও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।’ এরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গুতেরেসের প্রতিবেদন এমন একটি সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার তাদের মাতৃভূমিতে ফিরেছে বলে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। প্রতিদিন নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে ভিড় করছে রোহিঙ্গা সদস্যরা। এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি’ উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা এরই মধ্যে ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর ক্যাম্পে বসবাস করছে। এটি এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি, যাদের ওপর পাচারকারীদের লোলুপদৃষ্টির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বিশ্বের ৫১টি সরকার নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর মধ্যে রাখা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা, সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে—সিরিয়া, ইরাক, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, দ্য সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সুদান, দক্ষিণ সুদান, মালি ও সোমালিয়া।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

/এআর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি