ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

শাবিতে টিলা কেটে হল নির্মাণ, মানতে নারাজ প্রশাসন

শাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১৬:৫৪, ২৪ জুলাই ২০২০

সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম টিলার অংশ কেটে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ করা হচ্ছে। টিলা কাটার আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হলেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

চাইলে টিলার অংশ না কেটেও হলের নির্মাণকাজ করা যেতো বলে জানিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া নকশা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে টিলা কাটতে হচ্ছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেটের এই হলের নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে মেসার্স সিএফ কর্পোরেশন। যারা এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের কাজ করেছিল। 

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের মধ্যবর্তী টিলা সংলগ্ন জমিতে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি ছাত্রী হল। সেখানে টিলার একাংশ বুলডোজার মেশিন দিয়ে কেটে পাশের জমিতে ফেলা হচ্ছে। ওই মাটি দিয়ে ছাত্রী হলের জন্য নির্ধারিত অংশের নিচু জায়গা সমান করছেন শ্রমিকরা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সরেজমিনে দেখতে গেলে প্রথমে প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ হেদায়াতুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বাধা দিয়ে বলেন, ‘ভিসি স্যারের অনুমতি ছাড়া এখানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।’

পরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হল তৈরির জন্য নির্ধারিত লে-আউটেই উক্ত টিলার পাদদেশের কিছু অংশ আছে। শুধুমাত্র টিলার পাদদেশের সম্মুখভাগ কেটে ফেলা হচ্ছে, সম্পূর্ণ টিলা নয়। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে এমনিতেই টিলা ধসে পড়ে, টিলার ওই অংশ কেটে সিমেন্টের বাউন্ডারি দিলে টিলা ধস কমে যাবে।'

টিলার অংশ কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অংশ, আর পুরো অংশ কাটা হচ্ছে না বলে আমরা কোন অনুমতি নেইনি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (২০০০ সালে সংশোধিত) অনুসারে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটা অবৈধ।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাহাড় বা টিলা কাটার কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। কিন্তু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি সেখানে টিলা কাটা হচ্ছে না, আগে থেকে জমাকৃত মাটি সরানো হচ্ছে। তবুও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু তার ফোন বন্ধ।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জিয়োগ্রাফি এণ্ড এনভাইরনমেন্ট’ বিভাগের প্রধান মো. ম্যুয়িদ হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অবকাঠোমো তৈরিতে অবশ্যই তারা পরিমাপ করে তৈরি করছে, যেহেতু আমরা বিষয়টি দেখিনি তাই মন্তব্য করতে পারছি না।’

এদিকে টিলা কাটা নিয়ে ইতিমধ্যে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

মায়া বিশ্বাস নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটাই বাকি ছিল, পরিবেশ প্রকৃতি সংরক্ষণে যাদের ভূমিকা রাখার কথা ছিল তারাই চলছে এখন উল্টোপথে।’

আমিনুল ইসলাম তানিম নামের একজন লিখেছেন, ‘ইশ!!মানুষের বিবেক বুদ্ধি কোন লেভেলে গেলে এমন করে! যা দেখলাম জায়গার অভাব নাই আমাদের সাস্টে। বিল্ডিং এর টংগুলার পিছনে বা সেন্ট্রাল মসজিদের পিছনে এত খালি জায়গা রাইখা টিলা কাটা শুরু করছে উন্নয়নের নাম দিয়ে! ... ক্যাম্পাস বন্ধের ফায়দা সুদে আসলে লুটে নিচ্ছেন আপনারা’

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার, প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর (সিভিল) সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

তবে সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যে স্থানটি কাটা হচ্ছে সেটি আদৌ টিলা নয়, সেটা একটা মাটির ঢিবি। টিলা বলতে যা বোঝায় তার মধ্যে সেই স্থানটি পড়ে না। ওই স্থান থেকে টিলা অনেক দূরে অবস্থিত। আমরা বরাবরই পরিবেশ রক্ষায় সচেতন। একটি অসাধু চক্র এই বিষয়টাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। টিলা কেটে পরিবেশ বিপন্ন করার মত কোন কাজই আমরা করবো না। ইতিমধ্যে আমি জায়গাটির ছবি ও ভিডিও তুলে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে এই জায়গাটি সম্পর্কে বলেছি। আশা করছি এই মাটির স্তুপ কাটার ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ কোন প্রভাব পড়বে না।'

এআই/এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি