ঢাকা, শুক্রবার   ০৪ জুলাই ২০২৫

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি ইসমাইলকে

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২২

Ekushey Television Ltd.

শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও হার মানেনি ঢাকার নবাবগঞ্জে ইসমাইল রহমান (২৬)। জন্ম থেকেই পা দুটি প্যারালাইজড, নিজের কোন কাজই একা একা করতে পারেন না। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে থামাতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে এখন মাস্টার্সে পড়াশুনা করছেন ইসমাইল। 

তিনি প্রমাণ করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে অসম্ভব বলে কোনো কিছু নেই। কারো দয়া ও অনুগ্রহ নয়, আত্মনির্ভরশীল হয়েই এগিয়ে যেতে চান ইসমাইল।

উপজেলার কলাকোপা ইউনিয়নের পশ্চিম সমসাবাদ গ্রামের বাবুল হোসেন ভুলু’র তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ইসমাইল। ১৯৯৬ সালে ইসমাইলের জন্ম। জন্মের পর থেকে পরিবারের সদস্যরা মনে করতেন অন্য দশ জনের মতো ইসমাইলও স্বাভাবিক। কিন্তু জন্মের ১৩ মাসেও হাঁটতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েন বাবা-মা। 

এরপর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসক জানান ইসমাইল অন্যদের মতো স্বাভাবিক নয়, সে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। কখনো হাঁটতে পারবে না। তখন সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তবে এখন ইসমাইলের সাফল্যে গর্বিত পুরো পরিবার। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন বাবা-মা।   

জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন ইসমাইল। মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু হয় ছোট্ট ইসমাইলের। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোনো কিছুই তাকে স্কুল থেকে দূরে রাখতে পারেনি। 

২০১২ সালে নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এবং একই কলেজ থেকে ২০২০ সালে অনার্স শেষ করে বর্তমানে মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাস্টার্সে অধ্যায়নরত ইসমাইল।

মা-বাবার সঙ্গে ইসমাইল

ইসমাইল বলেন, বাবা-মা ও ভাইবোনেরা আমাকে কখনও অবজ্ঞা-অবহেলা করেননি। সংসারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাবা-মা আমার সব চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেন। আমার স্বপ্ন বিসিএস পরীক্ষা দিবো। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছি। নিজের মেধা অনুযায়ী সরকারি বা বেসরকারি একটি চাকরি চাই। যেন কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে না হয়।

ইসমাইলের মা ইয়াসমিন বাবুল বলেন, ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে অনেক কষ্ট করে নিজেই ক্লাসে নিয়ে গেছি। বৃষ্টির মৌসুমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে ছেলের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ দেখে সব কষ্ট মেনে নিয়েছি। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকায় হুইল চেয়ারও কিনে দিতে পারেনি। কিছুদিন আগে স্থানীয় চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল একটি হুইল চেয়ার দিয়েছেন। 

ছেলের এমন সাফল্য খুশি হলেও ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত ইসমাইলের মা। ভাল একটি চাকরি না পেলে কিভাবে চলবে ইসমাইলের জীবনযাত্রা এমন চিন্তায় দিন কাটে তার।

ইসমাইলের বাবা বাবুল হোসেন ভুলু বলে, ‘আমি গর্বিত এমন একটি ছেলের জন্য। যে কিনা শত প্রতিবন্ধকতায়ও থেমে থাকেনি। চেষ্টা করেছি সন্তানদের দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। তবে আর্থিকভাবে সমস্যায় রয়েছি। মেধা অনুযায়ী ইসমাইলের একটি চাকরির ব্যবস্থা হোক, এটা দেখতে চান তিনি।

এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইসমাইলের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছি। তাকে ইতিমধ্যে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরির ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হবে।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি