ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পকলায় বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্রের জার্নাল প্রকাশিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মূকাভিনয় হচ্ছে একটি শক্তিশালি শিল্প মাধ্যম। যা কথা না বলেও সবাইকে মনের কথা বলে দেয়। বাংলাদেশেও এর চর্চা বহুদিনের। তবে এদেশে এতো দিন পাশ্চ্যাত্যের মূকাভিনয় চর্চা চলে আসলেও এবার বাঙালি, বাংলাদেশি হিসেবে মূকাভিনয় শিল্পীরা নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মাঝে নবতর এক সৃষ্টির সন্ধানে কাজ শুরু করেছেন। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশের প্রখ্যাত মূকাভিনয় শিল্পী, মাইম আইকন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কাজী মশহুরুল হুদা। 

দেশপ্রেমের জায়গা থেকে জাতিসত্তার কথা চিন্তা করে তিনি অনুভব করেছেন বাঙলারও রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির ইতিহাস। যা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে একটি নিজস্ব আইডেন্টিটি থাকা জরুরী। এ ক্ষেত্রে মূকাভিনয় হতে পারে এর অন্যতম মাধ্যম। এজন্য ২০২২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্র’। তাদের উদ্দেশ্য দেশের সংস্কৃতিকে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। এরধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে অনেক কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। এবার হুদা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনই চলে এসেছেন বাংলাদেশে। এসেই ছয়দিন ব্যাপী এক কর্মশালা ভিত্তিক প্রোযোজনার আয়োজন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে। যা নতুন প্রজন্মকে আরও উৎসাহ যোগাতে, তাদের মূকাভিনয় চর্চাকে বেগবান করতে সচেষ্ট হবে বলে তার দাবি। এ কর্মশালায় অংশ নেন বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের মূকাভিনয় শিল্পীরা। যার সমাপ্তি হয়েছে ১২ ফেব্রুয়ারি (রোববার) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে।

বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্র ‘বাঙলার রূপ’ শীর্ষক এক মূকাভিনয় প্রযোজনা ও জার্নাল প্রকাশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে জানান দিলো বাংলার রয়েছে হাজার বছরের সংস্কৃতির ভান্ডার। যা শিল্পের সকল শাখায় প্রকাশ করা সম্ভব। আর এর মাধ্যমেই বিশ্বের কাছে দেশের পরিচিতি তুলে ধরা সহজ।

‘বাঙলার রূপ’ প্রযোজনায় সংলাপ ছাড়াই শুধুমাত্র শরীরী ভাষায় উঠে এসেছে নানা গল্প। শব্দহীন গল্পে ঠাঁই নিয়েছে দেশের ইতিহাস থেকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ধরা দিয়েছে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী খরস্রোতা সময় থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী স্বদেশের চিত্র। সংলাপহীন অভিনয়শৈলীতে বর্ণিত হলো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মকথা থেকে আগামীর পথে এগিয়ে চলার গল্প। সেই সূত্র ধরে উঠে এলো দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। নানা ঘটনাপ্রবাহের রেশ ধরে উদ্ভাসিত হলো সমকালীন যান্ত্রিক জীবনের চিত্র। যেখানে যন্ত্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিঃসঙ্গতায় ভুগতে হয় ব্যক্তিমানুষকে। 

মূকাভিনয়টির পরিকল্পনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী মশহুরুল হুদা। ছয়দিনের একটি প্রযোজনাভিত্তিক কর্মশালার মাধ্যমে সারা দেশের ১৪ জন মূকাভিনয় শিল্পীকে সংযুক্ত করা হয় পরিবেশনাটিতে। 

এ প্রসঙ্গে নির্দেশক মাইম আইকন কাজী মশহুরুল হুদা বলেন, “এখানে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশেষভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনার সূত্র ধরে যুক্ত হয়েছে প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়। বাংলাদেশের মূকাভিনয়ের স্টাইল এবং স্বতন্ত্র প্রকাশের মাধ্যমেই বাঙলার মূকাভিনয় রূপ বা নিজস্ব ধারা তৈরি হবে। পরবর্তীতে কর্মশালার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পীরা মূকাভিনয়ের এই আঙ্গিককে ধারণ করে নতুন গল্পকে উপজীব্য করে সৃষ্টি করবে নতুন নতুন পরিবেশনা।”

প্রযোজনাটির সংগঠক এবং নবধারার মূকাভিনয় শিল্পী রিজোয়ান রাজন বলেন, “বাঙলা মূকাভিনয়ের নিজস্ব ধারা তৈরির সঙ্গে আধুনিক মূকাভিনয়ের কৌশল ব্যবহারের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি হবে। এই প্রচেষ্টাই শেষ নয় এটা চলমান একটি প্রক্রিয়া।”

মূকাভিনয়ের গল্পে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। বাঙালির বীরত্বগাথার সাক্ষ্যবহ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন হয় দেশ। এরপর উঠে আসে কৃষিজীবনের চিত্র। গ্রামীণ সেই জীবনের রেশ ধরে ধরা দেয় চর দখলের ঘটনাচিত্র। ক্রমান্বয়ে উপস্থাপিত হয় বাংলার ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ পুতুল নাচ, হাডুডু খেলা, নৌকা বাইচসহ নানা বিষয়। ধাপে ধাপে উঠে আসে আগামীর বাংলাদেশের এগিয়ে চলার দৃশ্যকল্প।

এই মূকাভিনয়ের বিভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণ করেছেন মাসুদ রানা, জয়নুল আবেদিন, আসিফ মাহমুদ, ইমরান জাহান আরাফাত, সোলেমান মাহাদি, সায়েম উদ্দীন, নবকৃষ্ণ রুদ্র, ইমতিয়াজ পাভেল নীল, মুক্তা রানী ঠাকুর, জাহিদ হাসান রবি, গোলাম সারোয়ার, রাকিবুল ইসলাম, রবিউল আলম রবি ও রেজোয়ান রাজন।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ পর্বে বাঙলা মূকাভিনয় জার্নালের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং সকল অংশগ্রহণকারীকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি