শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি
প্রকাশিত : ০৯:২৬, ৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ০৯:৪১, ৯ জুলাই ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিং থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তিনি নিজেই বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আজ বুধবার (৯ জুলাই) ফাঁস হওয়া অডিও কলের সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি আই।
ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, গেলো বছর ছাত্র আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী সহিংসতার আশ্রয় নিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে তিনি নিজেই অনুমতি দেন।
বিবিসি'র যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে "প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার" করার অনুমতি দিয়েছেন এবং "তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, তারা গুলি করবে"।
অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।
ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ই জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন।
বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তারা জানিয়েছে।
ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।
তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।
বিবিসির অনুসন্ধানী দল বলছে, হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ওই ফোনালাপের রেকর্ডিং ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা।
ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, "রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।"
তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। আইসিটি মোট ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছে। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে পালিয়ে বর্তমানে ভারতে আশ্রিত হাসিনা ও তার দল নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
এএইচ
আরও পড়ুন