শ্রীলংকায় মোদির সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ?
প্রকাশিত : ১৬:২১, ৯ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৪২, ৯ জুন ২০১৯

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর প্রথমবারের মতো দু`দিনের বিদেশ সফরে গেলেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল শনিবার তিনি যান প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপ। সেখান থেকে শ্রীলংকা যান মোদি।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রীলংকার বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদির এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রীলংকার ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বারবার আঘাত আসায় নড়বড়ে দেশের ভিত। এ অবস্থায় ফায়দা নিতে চায় পাশ্ববর্তী দেশগুলো। ফলে শ্রীলংকার বর্তমান এই পরিস্থিতিতে মোদির এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে গত সোমবার শ্রীলংকায় সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ৯ মন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া গতকাল শনিবার শ্রীলংকার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সিসিরা মেন্ডিসকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। সব মিলিয়ে বর্তমানে শ্রীলংকায় এক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।
মাত্র দু`মাস আগে ইস্টার সানডের সময় শ্রীলংকায় বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহতের পর প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে মোদি ওই দেশে গেলেন।
রোববার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
এবারের সফরে মোদি সাক্ষাৎ করেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপালা সিরিসেনা, প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে, বিরোধী নেতা ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপক্ষর সঙ্গে। এছাড়াও ওই দেশের তামিল সংখ্যালঘুদের দল ‘তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স`-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করেন মোদি।
কলম্বোর ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আজ দুপুরে কথা বলেন তিনি। এরপর দুপুর ৩টার সময় তিনি ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
এরআগে, শুক্রবার দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার অস্টিন ফার্নান্ডো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কলম্বো সফরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই সফর দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষের প্রতি ভারতের সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।’
জানা যায়, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি যে বৈঠকটি করেন, তাতে দাক্ষিণাত্যের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, শ্রীলঙ্কায় মুসলিম চরমপন্থীদের সন্ত্রাসের পথ থেকে সরাতে দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে কর্মসূচি নিয়ে সে দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন মোদি। কারণ ভারতের স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, শ্রীলঙ্কায় যে আইএস মডিউলগুলির সক্রিয়তা বাড়ছে, তার জাল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের দিকেও ছড়াচ্ছে। এসব বিষয়ও আলোচনায় প্রধান্য পায়।
এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কেরালার এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। সে বলেছে কেরালায় আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করা হয় এবং তার কলকাঠি নাড়া হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার আইএস মডিউল থেকে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ তামিলনাড়ুতে যে গোপন আইএস সেল রয়েছে তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার হাসিমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, এসব বিষয়ও আলোচনা হয়েছে।
প্রায় দু`মাস আগে ইস্টার সানডের সময় শ্রীলংকায় বিস্ফোরণে ২৫০-জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
ওই হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সে সময় নিজের টুইটারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছিলেন, আমাদের ধর্মে এ ধরনের বর্বরতার কোনো স্থান নেই। শ্রীলঙ্কার জনগণের পাশে থাকবে ভারত। নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে আমি একাত্ম ও আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছি।
এর আগে মালদ্বীপ সফরে গিয়ে গতকাল শনিবার দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তব্যে মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদ শুধু একটি দেশের জন্য হুমকি নয়, গোটা অঞ্চল এমনকি সভ্যতার জন্যই হুমকি।
প্রতিবেশী পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে দেশটির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদই বিশ্বের সবচেয়ে বড় হুমকি।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বৈশ্বিক সম্মেলনেরও আহ্বান জানান মোদি।
আরও পড়ুন