ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সচেতনতায় ঢাবির শিক্ষার্থীরা গ্রামে

সোলায়মান শাওন

প্রকাশিত : ১৫:২৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৭:২৭, ৩০ আগস্ট ২০১৮

দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৬০০ জন শিক্ষার্থী। ঢাবি’র সাবেক ছাত্রদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের বৃত্তি পাওয়া এসব শিক্ষার্থী রাজধানীর বাইরে তাদের নিজ নিজ জেলায় এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

“শিক্ষা ও সামাজিক উদ্যোগের জন্য বৃত্তি” শিরোনামে এ বৃত্তি দিয়ে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন। অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল অথবা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন কিন্তু মেধাবী এমন ছাত্র-ছাত্রীদের এ বৃত্তি দিচ্ছে সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত দুই ধাপে ৭০৪ শিক্ষার্থীকে এ বৃত্তি দিয়েছে এসোসিয়েশন। এদের মধ্যে ৬০০ জন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী আগামী ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিন তাদের ভাগ হয়ে ১৫৫ উপজেলায় সমাজ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ উপলক্ষ্যে আগামীকাল একটি সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছে সংগঠনটি।

বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী তাকিয়া খানম ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমাদেরকে এ বৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় নিজ এলাকায় সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যেমন আমি নেত্রকোণা জেলা শহরে মাদকমুক্ত সমাজ, বাল্যবিবাহ রোধ এবং শিশু শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে যাওয়া প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে কাজ করব। আমাদের কাজ হচ্ছে, আমাদের এলাকাগুলোতে থাকা বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বাজার অথবা এমন সব জায়গায় যেখানে লোক সমাগম বেশি, সেখানে এসব কার্যক্রম করব। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে সচেতন করতে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করব।”

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা এ কাজগুলো করব। সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পায় না। আমরা যেন বাইরের সমাজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া শিক্ষা দিতে পারি, সেজন্যই এ কাজটি করছি। দেশে আলোকিত মানুষের পাশাপাশি আলোকিত সমাজ গড়ার উদ্দেশ্য এলামনাই এসোসিয়েশনের সঙ্গে আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই এসোসিয়েশনের অর্থ কমিটির আহ্বায়ক এবং এই বৃত্তি কার্যক্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ বৃত্তি দিচ্ছি। ৩টি শর্তে এ বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে, বৃত্তিপ্রাপ্তদের ভালো মানুষ হতে হবে। দ্বিতীয়, তাদের শিক্ষা জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সমাজ সচতেনতামূলক কার্যক্রম করতে হবে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, যারা বৃত্তি পাচ্ছে তারা কর্মজীবনে প্রবেশের ৪ বছর পর নিজেরা একজন দরিদ্র শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ বহন করবে। এখন তারা বৃত্তির আওতায় প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। তারাও তখন একজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে খরচ করবে।”

বৃত্তি প্রদানের এমন উদ্যোগের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে আনোয়ারুল পারভেজ বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দরিদ্র এবং শারীরিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। রাজধানীতে থেকে পড়াশোনা করার খরচ অনেক। আর তা যোগান দিতে অনেকে ছাত্র অবস্থায়ই কাজে জড়িয়ে পড়েন। সময়সাপেক্ষ এসব কাজ করতে গিয়ে তারা পড়াশোনায় মনযোগী হতে পারেন না। আমরা এলামনাই থাকতে এমনটা হতে দিতে পারি না। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।”

সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার এমন সব স্থানে তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমাজের মানুষদের সচেতন করার কাজ করবে। প্রতিটি এলাকায় এবং উপজেলায় একটি দলে সংগঠিত হয়ে এ কাজগুলো করবেন তারা। আগামী ২৫ তারিখ থেকে পরবর্তী ৪ দিন ১৫৫ জন ছাত্র-ছাত্রী এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তাদের কার্যক্রমের একটি ভিডিও এবং লিখিত অভিজ্ঞতার বর্ণনা তারা এসোসিয়েশনে জমা দেবেন। আমাদের এমন কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই এসোসিয়েশনও এ ধরনের কাজে আগ্রহী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

এসময় এ কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা করা ৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ।

এস এইচ এস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি