ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে বন্দুক হামলা

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে গোলাগুলির ঘটনায় শুধু এ বছরেই অন্তত ১১৩ জন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনায় প্রতিবছরে নিহতদের সংখ্যার তালিকা তৈরি করার উদ্দেশ্যে করা এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

২০১৮ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে কাজ করা পত্রিকা `এডুকেশন উইক` স্কুলে গোলাগুলির ঘটনার তালিকা তৈরি করা শুরু করে। তখন থেকে এপর্যন্ত মোট ২৩টি ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে তারা যেসব ক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে বছরে প্রায় ১৮০ দিন স্কুল খোলা থাকে; অর্থাৎ গত বছরে, গড়ে প্রতি আট দিনে একটি করে হামলা হয়েছে কোনো না কোনো স্কুলে। স্কুলে গোলাগুলির ঘটনা পর্যালোচনা করা আরেকটি গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে এপর্যন্ত হিসেব করলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংস্থা এবং ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি, যারা ভিন্ন পদ্ধতিতে স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনা লিপিবদ্ধ করে, তারা বলছে এবছরে স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি।

বছরব্যাপী `এডুকেশন উইক` এর কার্যক্রম চালানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই - স্কুলে গোলাগুলির কোনো ঘটনাই যেন `স্বাভাবিক` হিসেবে কখনো বিবেচিত না হয় সেটি নিশ্চিত করা এবং এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রত্যেককে স্মরণ করার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়া।

পাশাপাশি, এই বিষয়ে তথ্য একত্রিত করাও ছিল এই প্রকল্পের পেছনে একটি অন্যতম প্রধান কারণ। মার্কিন গণমাধ্যমে স্কুলে বন্দুক হামলার বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্বের সাথে জায়গা পেলেও প্রতি মাসে সারা দেশে ঠিক কতগুলো এ ধরণের হামলা হচ্ছে এবং তাতে হতাহতের সংখ্যাটা কত - সেবিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান কখনোই ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র বহন এবং এর ব্যবহার সংক্রান্ত আইনে কড়াকড়ি আরোপ করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছে বেশ কয়েকটি সংস্থা।

তবে এর পাশাপাশি, স্কুলের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার পক্ষে কথা বলার লোকও কিন্তু কম নেই।

স্কুলে গোলাগুলির ঘটনাগুলো বিশ্বের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমের অন্যতম প্রধান শিরোনাম হিসেবে জায়গা পেলেও, এর মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালেই।

যেমন গত মাসে ভার্জিনিয়া রাজ্যের একটি প্রাথমিক স্কুল থেকে সন্তানকে আনতে গেলে একজন অভিভাবকের পায়ে গুলি লাগার ঘটনাটি।

অন্য আরেকজন অভিভাবকের পকেটে থাকা বন্দুকটি থেকে ভুলক্রমে গুলি বের হয়ে ঐ অভিভাবকের পায়ে গুলি লাগায় এই ঘটনাটি ঘটে।

অথবা, মার্চে ম্যারিল্যান্ডের একটি স্কুলে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের গুলিতে দু`জন কিশোরের আহত হওয়ার ঘটনাটি - যেখানে ধরা পরার পরপর অভিযুক্ত কিশোর হাতের বন্দুক ব্যবহার করে আত্মহত্যা করে এবং পরবর্তীতে আহত দু`জনের মধ্যে একজন ১৬ বছর বয়সী কিশোরী মারা যায়।

স্কুলে গোলাগুলির ঘটনার বিষয়ে পরিসংখ্যান বা সংখ্যায় হেরফেরের অন্যতম প্রধান কারণ গোলাগুলির ঘটনার সংজ্ঞায়নের বৈপরীত্য।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংস্থার হিসেব অনুযায়ী এবছরে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি - যা যে কোনো বছরে হওয়া বন্দুক হামলার ঘটনার চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৬ সালে হওয়া ৫৯টি হামলার ঘটনা।

এই হিসেবে, স্কুলে বন্দুক হামলায় মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনার ক্ষেত্রেও সবচেয়ে খারাপ বছর ২০১৮। এবছরে এরকম ঘটনায় মোট হতাহতের সংখ্যা ১৬৩ জন; এর আগে ১৯৮৬ সালে সর্বোচ্চ ৯৭ জন হতাহত হয়েছিল।

৭০` এর দশকে প্রতিবছরে এই ধরণের ঘটনায় গড়ে হতাহতের সংখ্যা ছিল ৩৫ এর নীচে, যেখানে এবছর সেটি বেড়েছে তার প্রায় পাঁচ গুণ।

স্কুলে বন্দুক হামলা বা গোলাগুলির ঘটনা কীভাবে মোকাবেলা করা উচিৎ, সেবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা একত্রিত হয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি।

স্কুলে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের বিপক্ষে যেমন একদল সোচ্চার, তেমনি নিরাপত্তা রক্ষার্থে স্কুলের ভেতরে আরো বেশি বন্দুক রাখার পক্ষেও প্রচারণা চালাচ্ছে আরেকটি দল।

দুই পক্ষই বিভিন্ন ধরণের যুক্তি উপস্থাপন করে নিজেদের জন্য জন সমর্থন জড়ো করার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু দু:খজনক বিষয় হলো, কোন পন্থা অবলম্বন করলে স্কুলে গোলাগুলি এবং হামলা বন্ধ করা যেতে পারে সেবিষয়ে এখনও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষের কোনো পক্ষই।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি