ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সিইসির বিরুদ্ধে ৪ কমিশনারের অভিযোগ কেনো?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫০, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করার অভিযোগ তুলেছেন চার নির্বাচন কমিশনার।  সিইসির এ মনোভবের মধ্যদিয়ে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।

এ নিয়ে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে সিইসির কাছে ইউনোট (আন অফিসিয়াল নোট) দিয়েছেন ওই চার কমিশনার। এছাড়া, সম্প্রতি ইসিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিশনকে পাশকাটিয়ে তা করা হয় বলেও অভিযোগ জানানো হয়।

রোববার (২৪ নভেম্বর) চার নির্বাচন কমিশনার যৌথভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে ইউনোট দেন। এতে সিইসি ছাড়াও ইসির (নির্বাচন কমিশন) সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের ওপরও অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন তারা।

এই চার নির্বাচন কমিশনার হলেন, মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

অবশ্য সিইসির ওপর ক্ষুব্ধ হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনা সংক্রান্ত প্রকল্পের বিষয়ে তাদের অবহিত না করার অভিযোগ তুলেছিলেন তারা। যদিও পরে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছিল।

এবার অসন্তোষের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ইসির কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদেরকে জানানো হয় না। সিইসি আর সিনিয়র সচিব মিলেই সব কাজ করছেন। সম্প্রতি ইসিতে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এতে সংবিধান লঙ্ঘন বলে নোটে উল্লেখ করা হয়।

ওই চার নির্বাচন কমিশনারের যৌথ স্বাক্ষরিত নোটে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি কমিশনের ৩৩৯ জন কর্মচারি নিয়োগ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সচিবালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা হয়নি।

এতে আরও বলা হয়, মাঝে মধ্যে নির্বাচনের প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত কোনো কোনো বিষয় উপস্থাপন করা হলেও অন্য কোনো আর্থিক বিষয় কমিশনকে অবহিত করা হয় না, যা নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯-এর ১৬ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগ অনুযায়ী সবকিছু হয়েছে। নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি। ৯০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ইসি, পিএসসি, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, নিয়োগে কোনো অনিয়ম হলে কমিশন তদন্ত করে দেখতে পারে। কমিটির সুপারিশ কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী আমি সিইসির কাছে উপস্থাপন করেছি। ২০০৯-১০ সাল থেকে নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে।

চার কমিশনারের অভিযোগের বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ঘরোয়া আলোচনা পাবলিকলি আমার বলা ঠিক হবে না। উনারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এইটুকু বলতে পারি যা হয়েছে তা আইন ও বিধি অনুযায়ী।

জানা গেছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০ তম গ্রেডের ৩৩৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই পদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন আবেদন করেন। এ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় ইসির ব্যয় হয় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।

জালিয়াতির দায়ে মৌখিক পরীক্ষায় ১৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে ইসির জনবল শাখা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এসব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চারজন কমিশনার।

ইউনোটে চার কমিশনার উল্লেখ করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সিইসির সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার এক পর্যায়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগের বিষয় ও এ সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত।

বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সমর্থন দেন। ওই সভায় সচিব আরও বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়াদি কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য বিষয়াদি সিইসির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।

ইসি সচিবের এমন কথায় ক্ষুব্ধ হন চার কমিশনার। ফলে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। যেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০১০ এর ৫(১) ধারায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর ন্যস্ত থাকবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে; এবং একই আইনে ১৪(১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ী থাকবেন।

আইনের ১৪(২) উপধারা মোতাবেক, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি, নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে সচিবের কাছে দায়ী থাকবেন।

এ বিষয়ে কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিয়োগের বিষয় নয়, কমিশনের অনেক সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পারি না। সিদ্ধান্তগুলো আমাদের অবহিতও করা হয় না। এটা যাতে করা হয়, সে জন্য আমরা জানিয়েছি।’

এআই/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি