ঢাকা, শুক্রবার   ১০ মে ২০২৪

২১ আগস্ট হামলার বার্ষিকী

সেদিন রক্তে লাল হয়েছিল পিচঢালা রাজপথ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১১, ২১ আগস্ট ২০১৭

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর পুর্তি আজ। তের বছর আগের কথা। তারপরও ভুলে যাওয়ার মতো তো নয়ই, বরং শরীরে সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকেই। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের ব্যথাই ভুলতে দেয় না সেই দুঃসহ স্মৃতি।


২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট  বিকালে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরই তা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু গ্রেনেড হামলায় স্তব্ধ হয়ে যায় সেই কর্মসূচি। রক্তে লাল হয়েছিল পিচঢালা রাজপথ। নিজের রক্তাক্ত শরীরের কথা চিন্তা না করে মৃত্যুপুরীতে দাঁড়িয়ে হাজারো মুজিব ভক্তদের একটিই প্রশ্ন ছিল, প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন তো। মানববর্ম তৈরি করে যারা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বাঁচিয়েছিলেন তাদের কারো শরীর গ্রেনেডে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, কারো শরীরে শক্তিশালী গ্রেনেডের স্পিল্টার। মৃত্যুযন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিল অসংখ্য মানুষ।আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সেদিন একটি অ্যাম্বুলেন্সও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেক তাজা প্রাণ পিচঢালা রাজপথে ঝড়ে যায়।
সেদিন বিকেলের ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জীবন বাজি রেখে তাকে বাঁচিয়েছেন তার প্রিয় সহকর্মী-সহমর্মীরা। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আওয়ামী লীগ নেতারা সেদিন মানববর্ম তৈরি করেছিলেন তাকে ঘিরে। তাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন উৎসর্গ করেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশিদ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। বিকেল ৫টা ২১ মিনিট। কাঠফাটা রোদ আর তীব্র গরমের আঁচ তখনও আছে, তবে কমতে শুরু করেছে সূর্যের তেজ। লাল টকটকে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। চারপাশে ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম। তবুও ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চারপাশে উপচে পড়ছে শান্তিপ্রিয় অসংখ্য মানুষ।

ঠিক ১ মিনিট পর বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। ১৩টি গ্রেনেডের ভয়াবহতায় আকস্মিকভাবে নেমে আসে মৃত্যু। রক্তস্রোতে ভাসতে থাকে অসংখ্য মানুষ। মানবদেহের ছিন্নভিন্ন টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে এখানে-ওখানে।

মৃত্যুর ওই আঙিনায় দাঁড়িয়ে হতবিহ্বল নেতাকর্মীদের একটিই জিজ্ঞাসা প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কোথায়? তিনি বেঁচে আছেন তো! হন্যে হয়ে কমবেশি সবাই আওয়ামী লীগ সভাপতির গাড়ির খোঁজ করতে থাকেন। খানিক পরই যেন কানে আসে দৈববাণী `বেঁচে আছেন, বেঁচে আছেন সবার প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।`

স্মরণকালের নৃশংসতম ওই গ্রেনেড হামলায় স্পিল্গন্টারের আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েছিল শত শত মানুষ। রাজপথে লুটিয়ে পড়েছিল তাদের নিথর দেহ। চিরতরে হারিয়ে যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ। গুরুতর আহত অনেকেই এখনও স্পিল্গন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।

অশুভ শক্তির বিভীষিকাময় ওই শক্তিশালী গ্রেনেড হামলার আগমুহূর্তে ভাষণ দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংক্ষিপ্ত ভাষণ তখন শেষের দিকে। একজন ফটো সাংবাদিকের অনুরোধে আরও কিছুক্ষণ ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি। খোলা ট্রাক-মঞ্চ থেকে নেমে সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলে তার নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তখনই বিকট শব্দে একের পর এক বিস্ফোরিত হয় ১৩টি গ্রেনেড।

আওয়ামী লীগ সভাপতির বুলেটপ্রুফ গাড়ি লক্ষ্য করে ছুটে আসে ১২টি গুলি। এতেই আওয়ামী লীগ অফিসের চারপাশে রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। রক্তে লাল হয়ে যায় পিচঢালা রাজপথ। বীভৎস ওই গণহত্যার পরপরই সেখানে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। রক্তস্রোত বয়ে যায় সেখানে।

খোলা ট্রাকের চারপাশ এবং চেয়ারের ওপরেও ঝরে পড়ে ছোপ ছোপ রক্ত। কমবেশি সবাই আহত হয়ে স্তূপাকারে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষ মরণযন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে কোনোমতে বেঁচে যাওয়া মানুষের আহাজারি, মুমূর্ষুদের আকুতি, কাতর গোঙানিতে ভরে ওঠে চারপাশ। এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে অসংখ্য জুতা-স্যান্ডেল, ব্যানার-ফেস্টুন; অবিস্ফোরিত গ্রেনেড।

নির্মম ওই ট্র্যাজেডির ভয়াবহতা ও নির্মমতা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি ও আয়োজন ছিল না। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিতে না পারায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেও অনেকে ঘটনাস্থলে ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। প্রাণভয়ে দিগ্গি্বদিক ছোটাছুটি করতে থাকে অনেকে। প্রিয় মানুষের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে অনেকে কাঁদতে থাকে অঝোর ধারায়।

আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সেদিন একটি অ্যাম্বুলেন্সও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয় রিকশা-ভ্যানে, এমনকি ঠেলাগাড়িতে। তাদের উদ্ধারে পুলিশের কোনো তৎপরতাই ছিল না। উল্টো কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনী বেধড়ক লাঠিচার্জ ও অবিরাম টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে।

শেখ হাসিনা এখনও সেই হৃদয়বিদারক, অকল্পনীয় স্মৃতিভারে বেদনাহত। এখনও তাকে তাড়া করে ফেরে সেদিনের স্মৃতি। গ্রেনেড হামলায় তিনি স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই সিলেটে বোমা হামলার প্রতিবাদে নির্ধারিত সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিল সেদিন আর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ করতে পারেনি। অথচ এমন ঘটনার বিচার হয়নি আজও।

এ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা ২১ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

স্মরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ত্রয়োদশ বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

//এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি