স্ত্রীকে বিয়ে করায় জেল থেকে বেরিয়ে বন্ধুকে খুন
প্রকাশিত : ১৮:০০, ১৪ জুন ২০২২
দুর্ধর্ষ ১৩ মামলার আসামি জেলে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী তালাক দিয়ে বন্ধুকে বিয়ে করলে জেল থেকে বেরিয়ে বন্ধুকে খুন করে। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।
তিনি বলেন, সান্তাহার রেলওয়ে থানার নাটোর রেলওয়ে স্টেশনের ৩ নম্বর প্লাটফর্মের ওভার ব্রিজের ওপর গত ১ জুন দুপুর ১২টার দিকে রাকিব হোসেনকে (২৫) তার বন্ধু রাসেল হোসেন (৩১) ছুরিকাঘাত করে। পরে চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জেল হাজতে থাকা বন্ধুর সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করায় জামিনে মুক্ত হয়ে সাবেক স্ত্রীর বর্তমান স্বামীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
এ ঘটনার পর সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার)-এর তত্ত্বাবধানে ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে রাসেল হোসেন-এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এলআইসির একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে আসামি রাসেল হোসেন ওরফে কাটা রাসেলকে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
নাটোর সদর থানার দস্যুতার এক মামলায় গত ২৩ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান রাসেল। সেখানে বসেই স্ত্রীর তালাকনামা পান তিনি। লাবণ্য তারই বন্ধু রাকিবকে বিয়ে করে নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন, সে খবরও তার কাছে পৌঁছায়।
জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানায়, সে একজন উচ্ছৃঙ্খল যুবক। প্রায় ৭ বছর পূর্বে নিজেদের পছন্দে চক বৌদ্ধনাথপুর এলাকার লাবণ্য সিদ্দিকা সাথী (২৬)-এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে রেদোয়ান আহমেদ রোজ (৫) নামের একটি সন্তান রয়েছে। চলতি বছরের ২৩ মার্চ দস্যুতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে ছিলেন রাসেল। জেল হাজতে থাকাবস্থায় সাথী তার স্বামী রাসেলকে তালাক দিয়ে রাকিবকে বিয়ে করে নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করেন।
রাসেল এ সংবাদ পেয়ে ‘পরম বন্ধু থেকে চরম শত্রুতে’ পরিণত হওয়া রাকিবের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছক কষতে থাকে। গত ৩১ মে সে জামিনে মুক্তিলাভ করে এলাকায় এসে খুঁজতে থাকে রাকিবকে। ১ জুন ১২টার দিকে কৌশলে রাকিবকে ডেকে নিয়ে আসে নাটোর রেলওয়ে প্লাটফর্মের ৩ নম্বর ওভার ব্রিজের ওপর। সেখানে রাকিব তার স্ত্রীর সাবেক স্বামী এবং তার সাবেক বন্ধু রাসেল হোসেন ওরফে কাটা রাসেলকে দেখা মাত্রই দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টাকালে তার সঙ্গীয় লোকদের সহায়তায় হত্যার উদ্দেশে তার পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায় রাসেল। গুরুতর আহত অবস্থায় উপস্থিত লোকজন তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ হত্যার ঘটনার বিষয়ে ভিকটিম রাকিব হোসেন -এর বড় ভাই মো. শাকিল হোসেন (২৭) মো. রাসেল ওরফে কাটা রাসেলকে প্রধান আসামি করে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাকশি রেলওয়ে জেলার সান্তাহার রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করে।
রাসেল এর নামে খুন, অস্ত্র, চুরি, নারী নির্যাতনসহ মোট ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা তদন্তাধীন এবং বাকি মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন বলে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান।
এসি
আরও পড়ুন