হারুনকে ‘জ্বীন’ বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল
প্রকাশিত : ০৯:৪৭, ৩০ জুলাই ২০২৫

রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে জ্বীন বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আদালতে দেয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দির নথিতে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আদলত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই জুলাই আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয় মারণাস্ত্র ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি। শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা সে সময়ে পুলিশ প্রধানকে সরাসরি জানান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রতিরাতে বৈঠকে হতো বলে জানিয়েছেন তিনি।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে ২০১৮ এর ভোটের অনিয়ম, গুম, খুন, জুলাই আন্দোলন নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান।
যেখানে তিনি বলেছেন, গত বছরের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক হতো তাদের। বৈঠকে দুইজন সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ,ডিবির হারুন, র্যাবের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ অনেকে উপস্থিত থাকতেন। মূলত এ বৈঠকেই সব পরিকল্পনা হতো।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি আরও বলেন, কোর কমিটির এক বৈঠকে ৬ সমন্বয়ককে আটকের সিদ্ধান্ত হয়। যেখানে পরিকল্পনা করা হয় ভয়ভীতি ও মানসিক নির্যাতন করে কর্মসূচি প্রত্যাহারে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়ে জবানবন্দিতে স্পষ্ট করেছেন মামুন। উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।
জবানবন্দিতে মামুন বলেছেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যাবহার এবং আন্দোলন প্রবণ এলাকায় ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তাকে লেথাল উইপেন ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছিলেন। মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতি উৎসাহি ছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে।
সরকার পতনের দিন কী করেছিলেন মামুন সেটিও জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে একটি হেলিকপ্টারে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে যান তিনি। এরপর সেখান থেকে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জবানবন্দির শেষাংশে গুলি করে হত্যা, আহতের ঘটনায় সেসময় পুলিশ প্রধান হিসেবে অনুতপ্ত ও ক্ষমা চান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। যদিও ৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে শুধু মিটিংয়ে অংশ নেয়া ছাড়া নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কিছুই বলেননি তিনি।
সম্প্রতি আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান। সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের শর্তে রাজসাক্ষীর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এএইচ
আরও পড়ুন