ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

৪২ বছর সাজাপ্রাপ্ত কে এই সোমা?

প্রকাশিত : ১৭:০৩, ৬ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৭:০৬, ৬ জুন ২০১৯

জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এক ব্যক্তিকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বাংলাদেশি বংশদ্ভুত শিক্ষার্থী মোমেনা সোমার।

বুধবার দেশটির ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লেসলি টেইলর এই আদেশ দেন।

ভিক্টোরিয়া রাজ্যের কারাবিধি অনুযায়ী, সোমাকে কমপক্ষে ৩১ বছর ছয় মাস কারাগারে থাকতে হবে। এরপরেই তিনি প্যারোলের আবেদন করতে পারবেন।

গত বছর মেলবোর্নে যাওয়ার ৮ দিন পরই ৯ ফেব্রুয়ারি বাসা মালিক মালয়েশিয়ান ইমিগ্রান্ট রজার সিংগারাভ্যালুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করেন সোমা। যদিও রজার বর্তমানে সুস্থ আছেন। পরে তাকে গ্রেফতার করে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ। গ্রেফতারের পর অস্ট্রেলিয়ান প্রশাসন তার জঙ্গিবাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করে।

পরে বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি অবহিত করা হলে, তার জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার সত্যতা মেলে।

শুধু সোমা নয়, তার পরামর্শে ছোটবোন আসমাউল সুমনাও তার সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়ান।

গত বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি সোমা স্কলারশিপ নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যান। সেখানে অস্ট্রেলিয়ান এক পরিবারের নিকট আশ্রয় নেন সোমা। পরে ধীরে ধীরে হামলার পরিকল্পনার ছক আঁকতে থাকেন। দুএকদিন পরই পরিবারটির লোকজন তার  আচরণে পরিবর্তন দেখতে পেয়ে ‘ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগামের’ আয়োজকদের তার বাসা থেকে সরিয়ে নেয়ার কথা জানান।

পরে রজার সিংগারাভ্যালুর বাসায় ওঠেন সোমা। এবং ৯ দিনের মাথায় তার ওপর হামলা চালান।

মোমেনার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। ২০০৯ সালে ঢাকার লরেটো স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল, ২০১১ সালে মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে  ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করে। এরপর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে। তার বাবা জনতা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দুই বোনের মধ্যে মোমেনা বড়। মোমেনার চাচা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তারা ঢাকার কাজীপাড়ায় থাকতেন।

গ্রাজুয়েশন চলাকালে তার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। প্রথম দিকে হিজাব না পড়লেও ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে কট্টরভাবে ইসলামিক নিয়ম মেনে চলতে দেখা যায় তাকে। এমনকি বাসাতে টিভি চালানোও বন্ধ করে দেয় সে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা সে সময় জানান, ২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইরাক-সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেটের কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশি অনেক তরুণ জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়েছিল। সে সময় ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অনেক শিক্ষার্থীও জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে।

২০১৬ সালে সম্মান শ্রেণি সম্পন্ন করার আগে মোমেনা সোমার সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ ছিল। এদের মধ্যে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় অংশ নিয়ে নিহত নিবরাস ইসলাম ও রোহান ইমতিয়াজ অন্যতম। তবে, তাদের সঙ্গে সরাসরি সোমার কখনো দেখা হয়নি বলে জানায় তোর বোন।

২০১৮ সালে মোমেনা যখন গ্রেফতার হন, সে সময় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তাদের বাসায় হাজির হলে বোনের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী প্রশাসনের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায় সুমনা। পরে তাকে রিমান্ডে নিলে জঙ্গিবাদের জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেন তিনি। বিচার চলাকালীন সোমা বাংলাদেশের হাইকমিশন কর্তৃক কোন ধরনের সহযোগিতা চান বলে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে জানানো হয়। আদালতের কাছে জঙ্গিবাদের সম্পকৃক্ততার বিষয়টি স্বীকারও করেন মোমেনা। ফলে, দীর্ঘ শুনানি শেষে ৪২ বছরের সাজা দেন আদালত। 

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরে কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. হায়দার আলী খান বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার আইন অনুযায়ী সোমার সাজা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের বলার কিছু নেই।

মোমেনা সাজায় বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না জানিয়ে বেসরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, “হ্যাঁ এটা সত্য যে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রথম কোন নারী সন্ত্রাসের দায়ে ৪২ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলো এবং তিনি একজন বাংলাদেশি ছাত্রী। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের এক ছাত্রীর সন্ত্রাসী আক্রমণ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।”

হুমায়ূন কবির আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকারও সোমার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করে। কারণ সোমার আক্রমণের পর অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া বন্ধ করেনি। সেখানে শত শত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে।”

তিনি বলেন, দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চমৎকার। সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশর সহযোগিতা রয়েছে। সন্ত্রাস দমনের জন্য দুদেশ গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করে থাকে বলে জানান তিনি।

আই//

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি