ঢাকা, রবিবার   ২০ জুলাই ২০২৫

ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয় উইঘুর নারীকে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

ইলেকট্রিক শক, যৌনাঙ্গে যন্ত্র ঢুকিয়ে অত্যাচারসহ নানাবিধ নির্যাতনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন চীনের উইঘুর প্রদেশের মিহিরগুল তুরসুন। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে মিশরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়তে যান তিনি। সেখানেই প্রেম, বিয়ে। তিনটি সন্তানের জন্মও দেন তুরসুন। ২০১৫ সালে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চিনে ফেরেন তিনি।

সঙ্গে ছিল তার তিন সন্তান। এর পরই বদলে যায় তার জীবন। বাচ্চাদের থেকে আলাদা করে তাকে বন্দিশিবিরে নিয়ে যায় চিন সরকার। বিভিন্ন দফায় তিন বার তাকে আটক করা হয়। চালানো হয় নারকীয় অত্যাচার। মাকে না পেয়ে অযত্নে মারা যায় তার ছোট সন্তান। বাকি দুই সন্তানও এখনও দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার। সোমবার ওয়াশিংটনে চিনের উইঘুর প্রদেশের মুসলিমদের ওপর চিন সরকারের এই বর্বরতার কাহিনী শোনাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মিহিরগুল তুরসুন।

উইঘুর প্রদেশের মুসলিমদের ওপর চিন সরকারের অত্যাচারের অভিযোগ এই প্রথম নয়। চীনের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আনুমানিক ২০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের। সোমবার আমেরিকার ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে পৃথিবীর ২৬টি দেশের ২৭০জন গবেষক ও সমাজকর্মী উইঘুরদের ওপর অত্যাচার নিয়ে সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যৌথ বিবৃতি দেন। সেখানেই আনা হয়েছিল মিহিরগুল তুরসুনকে।

‘অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি বারবার ওদের কাছে আমাকে মেরে ফেলতে অনুরোধ করেছি’, জানিয়েছেন মিহিরগুল। একই সঙ্গে তিনি সামনে এনেছেন তার ওপর চলা ভয়াবহ অত্যাচারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। ২০১৫ তে দেশে ফেরার পর তাকে তিন মাসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল বন্দিশিবিরে। এই সময়েই মারা যায় তার ছোট সন্তান। শুধু তাই নয়, বাকি দুই সন্তানের ওপরও বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন মিহিরগুল।

দুই বছর পর তাকে ফের আটক করা হয় বন্দিশিবিরে। কয়েক মাস বন্দি রেখে নিরন্তর অত্যাচার চালানো হত তার ওপর। ছেড়ে দেওয়ায় সাত মাস পর আবার বন্দি করা হয় তাকে। এই দফায় তাকে বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছিল তিন মাসের জন্য।

বন্দিদশায় তাকে বিভিন্ন অজানা ওযুধ খেতে বাধ্য করা হত বলে জানিয়েছেন মিহিরগুল। এই ওষুধ খেয়ে অনেক সময়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন তিনি। যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে তিন মাসের মধ্যে ন’জন মহিলা মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখানে ক্যামেরার সামনে তাকে মলমূত্র ত্যাগ করতে হত। চিনের কম্যুনিস্ট পার্টির স্তুতিতে গান করতে বাধ্য করা হত যখন তখন। তার কথায়, ‘‘ এক দিন আমাকে ন্যাড়া করে হেলমেটের মতো কিছু একটা পরিয়ে একটা চেয়ারে বসানো হয়। ইলেকট্রিক শক দেওয়ার সময় ভীষণ ভাবে কাঁপছিলাম আমি। যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ছিল আমার শিরা আর ধমনীতে। তার পর আর কিছু মনে নেই। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু মনে আছে, আমি উইঘুর বলে ওরা আমাকে গালি দিচ্ছিল।’’

এর পর সন্তানদের নিয়ে মিশর যাওয়ার অনুমতি পান মিহিরগুল। কায়রো পৌঁছেই মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। তাকে আশ্রয় দেয় আমেরিকা। এই মুহূর্তে তিনি বসবাস করেছেন আমেরিকার ভার্জিনিয়ায়। ভুলে যেতে চান নিজের পিতৃভূমির ভয়াবহ স্মৃতি।

এই ধরণের বন্দিশিবির থাকা কথা অস্বীকার করেছে চিন সরকার। কিন্তু অপরাধীদের জন্য উইঘুর প্রদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা থাকার কথা জানিয়েছে তারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আড়ালেই বন্দিশিবির চালাচ্ছে বেইজিং। পুরো চিন জুড়ে ‘এক শিক্ষা, এক সংস্কৃতি’ চালু করতে বেইজিং সরকারের পরীক্ষা নিরীক্ষার শিকার উইঘুর মুসলিমরা, এমনটাই অভিযোগ তাদের। এই অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে অনেকেই উইঘুর প্রদেশ ছেড়ে জীবন বিপন্ন করে পালাচ্ছেন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকায়। শুধু উইঘুর নয়, চিন সরকারের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার এই অঞ্চলের কাজাখ মুসলিমসহ আরও বেশ কিছু প্রাচীন জনজাতি, এমনটাই জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি।

সূত্র-আনন্দবাজার

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি