ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কাউকে না বলেই নেপাল গিয়েছিলেন সাংবাদিক ফয়সাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২৪, ১৩ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

নেপালে ঘুরতে যাওয়ার কথা বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের কাউকেই বলেননি বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ। কর্মস্থল থেকে পাঁচ দিনের ছুটি নিলেও অফিসের কাউকেও না জানিয়েই নেপাল গিয়েছিলেন তিনি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বড় বোন শিউলীকে বলেছিলেন— ‘ঢাকার বাইরে যাচ্ছি।’ এটাই ছিল পরিবারের কারও সঙ্গে ফয়সালের শেষ কথা। প্রসঙ্গত, সোমবার (১২ মার্চ) নেপালে বিমান দুঘর্টনায় নিহত ৫০ জনের তালিকায় সাংবাদিক ফয়সালের নামও রয়েছে।

শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌর এলাকার সামসুদ্দিন সরদার ও সামসুন্নাহার বেগমের বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ (২৯)। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। ২০০৪ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকায় তিতুমীর কলেজে এইচএসসি এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন ফয়সাল। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত ফয়সাল বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

রাজধানীতে ধানমন্ডির ১৫ নম্বরে বড় বোন শিউলী আক্তারের বাসায় থাকতেন তিনি। সর্বশেষ গত ৮ থেকে ৯ মাস আগে পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শরীয়তপুর এসেছিলেন ফয়সল।
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক ফয়সালের মায়ের আহাজারিমঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ফয়সালদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকের মাতম চলছে স্বজনদের মধ্যে। ছেলের শোকে ফয়সালের মা শামসুন্নাহার বেগম অচেতন প্রায়। ফয়সালের বাবা সামসুদ্দিন সরদার `বাবা, আমার বুকে আসো বাবা` বলে বিলাপ করছেন। মায়ের হাতে রান্না করা গরুর মাংসের খিচুড়ি খুবই পছন্দ ছিল ফয়সালের। মা শামসুন্নাহার বেগম মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরে পেলে সেই খিচুড়ির কথা মনে করেই আহাজারি করছেন।

ফয়সালের বাবা সামসুদ্দিন সরদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ছেলে যে নেপাল গিয়েছে সেটা পরিবারের কেউই জানতো না। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার অনেক পড়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারি ফোন দিয়ে ফয়সাল কোথায় জানতে চান। এরপর তিনি বড় মেয়েকে ফোন দেন। তখন বড় মেয়ে জানায়, ফয়সাল ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা বলে সকালে বাসা থেকে বের হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। রাতে তারা নিশ্চিত হন নেপালে বিধ্বস্ত বিমানে ফয়সাল ছিল।

উল্লেখ্য, সোমবার (১২ মার্চ) চার জন ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ মোট ৭১ জন আরোহী নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নেপালের সেনা সূত্রে জানা গেছে, এই দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। নিহতদের তালিকায় সাংবাদিক ফয়সালের নামও রয়েছে।


এদিকে, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) সাইফুল ইসলাম বলেন, ফয়সাল নেপালে গেছেন, সেটি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতাম না। দুর্ঘটনা ঘটার পর খবর পাই তিনি নেপালে গেছেন। দুর্ঘটনার পরে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত আহত-নিহত ব্যক্তিদের তালিকা দেখে জানতে পারি, ফয়সালের নাম সেখানে আছে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, নিশ্চিত হতে অফিস থেকে ফয়সালের পাসপোর্ট নম্বর জোগাড় করে দেখি, সেটা আমাদের সহকর্মী ফয়সালই। তারপরও আমরা আশা ছাড়িনি। আজ সকালে আমাদের অফিসের দুজনসহ ও ফয়সালের এক মামাকে নেপালে পাঠানো হয়েছে। তারা নিশ্চিত করে কিছু জানাননি। তারা হাসপাতালগুলোয় খোঁজ নেবেন। হয়তো ফয়সাল মারা গেছেন, কিন্তু আমরা আশা ছাড়িনি। একেবারে নিশ্চিত হয়ে এ বিষয়ে আমরা ঘোষণা দিতে চাই।
এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি