ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৩ মে ২০২৫

জাবির আইন বিভাগে স্বজনপ্রীতি ও ফলাফল প্রভাবিত করার অভিযোগ

জাবি সসংবাদদাতা 

প্রকাশিত : ১৫:৩৪, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি, পছন্দের শিক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেয়া এবং অন্য বিভাগের একজন শিক্ষক কর্তৃক ফলাফল প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা। আগামী ৩ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে ফয়সালা রনা হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ে দুই দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লিখিত দাবি দুটি হলো, ৪৮তম ব্যাচের মাস্টার্সের প্রকাশিত ফলাফল অবিলম্বে বাতিলপূর্বক নিরপেক্ষ শিক্ষক দ্বারা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং অভিযুক্ত বাংলা বিভাগের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ফলাফল প্রকাশে প্রভাবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

স্মারক লিপিতে বলা হয়, পতিত স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট আইন অনুষদের ডিন এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার দাস, তার আজ্ঞাবহ সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পাল এবং তার স্ত্রী সহকারী অধ্যাপক বনশ্রী রানীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে বিভাগে অনুষ্ঠিত সকল পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি এবং পছন্দের শিক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে আমরা আইন বিভাগের সকল শিক্ষার্থীরা বিস্তর অভিযোগ জানাচ্ছি। শিক্ষাছুটিতে থাকা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে তারা আইন ও বিচার বিভাগে একটি 'স্বৈরাচারী সেল' গঠন করেছিলেন। যেখানে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হতো। শিক্ষার্থীদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। বিশেষত মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা, অপছন্দের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়া, এমনকি গায়ে হাত তোলার মত ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন তারা। স্বৈরাচারী তাপস গ্যাংয়ের মানসিক নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি বিভাগের শিক্ষকরাও। তার নির্দেশনার প্রতি আজ্ঞাবহ না হলে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের মানসিক নির্যাতনের কথাও আপনার অজ্ঞাত থাকার কথা নয়। 

আমরা আশঙ্কা করি আইন ও বিচার বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপকের চাকরি ছেড়ে দেয়ার ঘটনার সাথেও এই স্বৈরাচার তাপস গ্যাংয়ের মানসিক নির্যাতনের ভূমিকা রয়েছে। তাই স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে একযোগে এই শিক্ষক মুখোশধারী অমানুষরা তড়িঘড়ি করে শিক্ষাছুটি নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একাট্টা হয়ে তাপস কুমার দাসের সময়ে সংঘটিত দুষ্কর্মের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করে। সেই সাথে উক্ত সময়ে অনুষ্ঠিত সকল পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন দাবি জানিয়েছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দুটো তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।

তাপস এবং সুপ্রভাতের একচ্ছত্র আধিপত্যের নমুনা হিসেবে বলতে চাই, উপযুক্ত সিনিয়র শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও ২০১৮-১৯ সেশনের (৪৮তম ব্যাচ) টানা দুই বর্ষের (৩য় এবং ৪র্থ বর্ষ) চূড়ান্ত পরীক্ষায় ডিন তাপস কুমার দাসের ক্রীড়নক সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পাল জোরপূর্বক পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আসীন হন স্বয়ং তাপস কুমার দাস। বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার সুযোগ নিয়ে ১ম এবং ২য় পরীক্ষক নির্ধারণ, প্রশ্ন প্রণয়ন ও মডারেশন, নম্বরপত্র তৈরিসহ সকল কাজে তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে আমরা আশঙ্কা করি। স্নাতক ২য় বর্ষ থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত তাদের রোষানলে পড়েছে ৪৮তম ব্যাচের আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে আজ্ঞাবহ শিক্ষার্থীদের জন্য এই দীর্ঘ সময়কাল ছিল 'একাদশে বৃহস্পতি'।

সেই আশঙ্কা থেকেই আমরা ৪৮তম ব্যাচের ৪৩ জন শিক্ষার্থী ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের পক্ষে উপাচার্য বরাবর বিভাগের মাধ্যমে ইমেইলযোগে আবেদনপত্র জমা দেই। উল্লেখ্য যে, ৪ জন শিক্ষার্থী পুনর্মূল্যায়নের বিপক্ষে আবেদন করে। ইতিমধ্যে, বিভাগ থেকে আমরা জানতে পেরেছি গত ২৬/০৯/২৪ তারিখে আবেদনপত্রের হার্ডকপিসহ রোল নম্বর উল্লেখ করে স্নাতকোত্তর পরীক্ষার রেজাল্ট পুনর্মূল্যায়নের ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে নোট পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং তদন্ত চলমান। এখন পর্যন্ত তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় নি। তদন্ত চলমান থাকা সত্ত্বেও, ৪৮তম ব্যাচের ফলাফল হঠাৎ ০৩ ডিসেম্বর প্রকাশ করে প্রশাসন।

পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি, ৪৮তম ব্যাচের ফলাফল প্রকাশ করার জন্য বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোছা. আমিনা খাতুন ওরফে আমিনা মমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছিলেন। জানা গেছে, উক্ত শিক্ষিকার ভাই আমাদের সাথে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, এবং বিভাগের আসন্ন শিক্ষক নিয়োগে তার ভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টায় রয়েছেন, যা স্পষ্টত 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট'। পলায়নপর স্বৈরাচারী ডিন তাপস কুমার দাসের তৈরি করা এই ফলাফলে ইতিমধ্যে তাদের সেই 'ইন্টারেস্ট' স্পষ্ট হয়েছে। এই শিক্ষিকার প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এমনকি কলা অনুষদের ডিন পর্যন্ত আইন বিভাগের ফলাফলের খবরদারির অভিযোগ আমরা শুনতে পেয়েছি।

আমরা ফলাফল প্রকাশের পূর্বেই নিরপেক্ষভাবে পুনর্মূল্যায়ন চেয়েছিলাম যেন সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়। ফলাফল প্রকাশের পূর্বেই যদি পুনর্মূল্যায়ন হয় তাহলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হত। কেউ ফলাফলে সংক্ষুব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত না। আমরা চেয়েছি, কেউ যেন অযাচিতভাবে কোনো ব্যাক্তির রোষানলে পড়ে পরীক্ষায় কম নম্বর না পায়, একইসাথে যারা ২য় বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত 'অসমুচিত অনুগ্রহ' পেয়ে এসেছেন তাদেরও একটি বিহিত হোক। কিন্তু, শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে উক্ত শিক্ষক তার হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছেন।

৪৮তম ব্যাচের ৪৩ জন শিক্ষার্থীর আবেদনকে অবমূল্যায়ন করে অন্য বিভাগের একজন শিক্ষকের একক প্রভাবে ফলাফল প্রকাশের হঠকারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেইসাথে, তদন্তাধীন বিষয়ের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগে ফলাফল প্রকাশকে আমরা উদ্বেগজনক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা হিসেবে দেখছি। তাই আমরা আইন ও বিচার বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপরোক্ত উল্লেখিত দুটি দাবি জানিয়েছি।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি