বন্ধ হচ্ছে ব্যাংকবহির্ভূত ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সেপ্টেম্বরে প্রক্রিয়া শুরু
প্রকাশিত : ১৭:৫৩, ২৩ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৮:১৯, ২৩ আগস্ট ২০২৫

দেশের আর্থিক খাতে প্রথমবারের মতো ব্যাংক-বহির্ভূত (এনবিএফআই) ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে যাচ্ছে। ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩’ অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- প্রাইম ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, পিপল’স লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
গ্রাহকদের স্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়।
সূত্রমতে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো বন্ধ করা হবে এবং এজন্য লিকুইডেটর নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো অবসায়নে সরকারি কোষাগার থেকে অন্তত ১০-১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এনবিএফআইগুলোতে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।
জানা যায়, এর আগে চলতি পঞ্জিকা বছরের গত জানুয়ারিতে অধিক পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন ২০টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বন্ধের জন্য তালিকাভুক্ত উল্লেখিত ৯টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকী ১১টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- বে লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, আইআইডিএফসি, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, সিভিসি ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্বলতা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে ভালো অবস্থানে থাকা ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রতিও সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিপুল অর্থ আত্মসাতে পিকে হালদার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
উল্লেখ্য, চিহ্নিত ২০ প্রতিষ্ঠানে মোট আমানতের পরিমাণ ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ও ২৬ শতাংশ ব্যক্তিগত আমানত।
জানা যায়, সার্বিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় উল্লেখিত ২০ প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ইতোপূর্বে সবকটি এনবিএফআই-কে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বন্ধের জন্য তালিকাভুক্ত ৯ প্রতিষ্ঠানের জবাব ও কর্মপরিকল্পনা সন্তোষনক নয়- বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে জন্য এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যমান ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩’ আইন অনুযায়ী, সরকারের অনুমতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক হাইকোর্টে আবেদন করতে পারবে। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি আমানত, ঋণ বা ধার শোধ করতে না পারে, তবে কোম্পানি আইনেও তাদের রক্ষা করা যাবে না।
বন্ধের জন্য তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের সুরক্ষার বিষয়ে সম্প্রতি গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী, এনবিএফআই-এর আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার আইনত বাধ্য নয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন সংশোধিত ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স অ্যাক্টে এনবিএফআইগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা আমানতকারীদের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের সুরক্ষা দেবে। এ পরিবর্তনের লক্ষ্য হলো ভবিষ্যতে আমানতকারীদের জন্য অন্তত আংশিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত: দেশে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত মার্চ শেষে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। এটি এনবিএফআইগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
তথ্য মতে, এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের ৫০ শতাংশের অধিক রয়েছে বন্ধের জন্য তালিকাভুক্ত ৯ প্রতিষ্ঠানে।
অন্যদিকে জানা যায়, দুর্বল তালিকাভুক্ত ২০টি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই লোকসানী। এগুলোর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নেই। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠা পরিচালিত হচ্ছে স্বতন্ত্র পরিচালকের মাধ্যমে।
এসএস//
আরও পড়ুন