ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ জুলাই ২০২৫

‘ব্যবসায় প্রতিযোগিতা থাকলে জিডিপি বাড়বে ৩ শতাংশ’ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৯:২৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

ব্যবসায় সুস্থ্য প্রতিযোগিতা থাকলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। কারণ বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে যে কোন ক্ষেত্রে ভুল বিনিয়োগ হয় না। পণ্যের উৎপাদন খরচ কম হয়। নতুন কিছু আবিষ্কার হয়। পণ্যের দামও কমে যায়। সামগ্রীক বিবেচনায় ভোক্তারা লাভবান হয় এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়ে। 

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতায় প্রবৃদ্ধি: বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা কমিশন ও ইআরএফ যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। ইআরএফের সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মো. আব্দুর রউফ, পরিচালক মো. খালেদ আবু নাছের, শ্রম ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক মুনির চৌধুরী এবং ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইর পরামর্শক মো. মঞ্জুর আহমেদ। 

 

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, সবক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা উচিত। ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিযোগিতা থাকলে মোট দেশজ উৎপাদন ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া কৃষকদের উৎপাদনে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ন্যায্য দাম পাচ্ছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারম্যান আরও বলেন, কমিশনের মূল উদ্দেশে হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করতে সবাইকে সচেতন করা। সবার অংশগ্রহণে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা।

মো. আব্দুর রউফ বলেন, বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে বিভিন্ন নামে প্রতিযোগিতা আইন ও কমিশন রয়েছে। যে সব দেশ আইনটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে, ওই সব জিডিপি ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০১২ সালে এই হয়েছে। আর আইন বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালে কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু এখনও বিধিমালা ও প্রশাসনিক কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়ানোর কাজ চলছে। 

তিনি বলেন, এই কমিশনের কাজ হল দেশে টেকসই অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা। সার্বিকভাবে মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়ানো। তারমতে, উদ্যোক্তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে পণ্যের মান ও উৎপাদন বাড়ে। কারণ তখন উদ্যোক্তারা বাজার দখলের জন্য নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসে। তিনি বলেন, সুস্থ প্রতিযোগিতার জন্য পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম বিশাল ভুমিকা পালন করতে হবে। দেশে অনেকগুলো কমিশন রয়েছে। কিন্তু ওই কমিশন সংস্কারের অংশ হিসাবে অন্য সংস্থা থেকে রূপান্তর হয়ে কমিশন হয়েছে। কিন্তু এই কমিশন একেবারে নতুন। ফলে এটি গুছিয়ে উঠতে সময় লাগছে। 

মুনির চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দেশের অর্থনীতিকে নিজস্ব শক্তিতে দাঁড়াতে হলে প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা রয়েছে। প্রতিযোগিতা না থাকলে এক চেটিয়ে পরিবেশ তৈরি হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার একজন ডিশ (কেবল নেটওয়ার্ক) ব্যবসায়ীকেই প্রতিযোগিতা করতে হয়। আমরা প্রত্যেকে প্রতিযোগিতার মধ্যে আছি।  বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যে পণ্য আছে সেখানেও এ প্রতিযোগিতা থাকতে হবে। প্রতিযোগিতা না থাকলে মনোপলি সৃষ্টি হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের লোকবল নিয়োগের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) আওতায় একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের কার্যক্রম আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে।

ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, দেশের অর্থনীতি ও শিল্পায়নের বিকাশে কাজ করছে গণমাধ্যম। এক্ষেত্রে দেশের স্বার্থে যে কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইআরএফের সদস্যরা পাশে থাকবে। 

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিযোগিতা কমিশন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ওইভাবে মানুষের সামনে আসেনি। আগামীতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে সাংবাদিকরা। 

বক্তারা বলেন, দেশে উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও তা সুস্থ নয়। এক্ষেত্রে পণ্যে ভেজাল দেয়ার প্রতিযোগিতা রয়েছে। খাবারের নামে মানুষ কী খাচ্ছে, তা কেউ জানে না। কিন্তু প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়ন হলে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ হবে। এতে পণ্যের দামও কমবে। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আইনে এই কমিশনকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া আছে। ফলে দেশের যে কোনো ব্যক্তি হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করা, তথ্য যাচাই ও পরিদর্শন করতে পারবে কমিশন। আর এ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা কমিশনে কয়েকটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে দুটি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে এই কমিশন। 

সেমিনারে প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমিশনের পরিচালক আমীর আব্দুল্লাহ মো. মঞ্জুরুল করিম।

আরকে/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি