ঢাকা, শুক্রবার   ১১ অক্টোবর ২০২৪

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি ও বিস্তার নিয়ে যেসব তত্ত্ব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০১, ২১ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১০:২১, ২১ মার্চ ২০২০

সাংহাইয়ের একটি ট্রেনে ভেতর যাত্রীরা। চীনে নতুন আর কোনো সংক্রমণ হচ্ছে না- বিবিসি

সাংহাইয়ের একটি ট্রেনে ভেতর যাত্রীরা। চীনে নতুন আর কোনো সংক্রমণ হচ্ছে না- বিবিসি

কে ছড়ালো করোনা ভাইরাস - যুক্তরাষ্ট্র, চীন না ব্রিটেন? আসলেই কি এটি জীবজন্তুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ঢুকেছে নাকি জীবাণু অস্ত্রের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? সংক্রমণ যত ছড়িয়ে পড়ছে, তার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। খবর বিবিসি’র। 

শুধু যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ছয়লাব তাই-ই নয়, কিছু দেশের মূলধারার কিছু কিছু মিডিয়াও এসব তত্ত্ব প্রচার করছে। ষড়যন্ত্র এসব তত্ত্বগুলো আসছে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইরান থেকে। এসব দেশের সরকারগুলো সরাসরি এসবের পেছনে না থাকলেও, সরকারের সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তির কথায় এবং মিডিয়ায় এগুলো স্থান পাচ্ছে।

কে কাকে সন্দেহ করছে?
চীন এবং ইরানের ভেতর থেকে সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। চীনের ভেতর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষজন হরদমসে লিখছেন এবং শেয়ার করছেন যে, চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র হিসাবে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে।

শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, একজন চীনা কূটনীতিক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রও ঝাও লিজিয়িান টুইটারে গত ১১ মার্চে মার্কিন একটি কংগ্রেস কমিটির সামনে সেদেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান রবার্ট রেডফিল্ডের একটি শুনানির ভিডিও ক্লিপ পোষ্ট করেছেন। ঐ ফুটেজে রেডফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে বলছেন, ‘পরীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-নাইন্টিনের কারণেই ঐ মৃত্যু।’

যদিও রেডফিল্ড বলেননি কখন ঐসব মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু চীনা ঐ কূটনীতিক টুইটারে ঐ ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে সঙ্গে লিখেছেন, ‘সিডিসি ধরা পড়ে গেছে। কখন প্রথম রোগীটি যুক্তরাষ্ট্রে মারা গিয়েছিল? কত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল? কোন কোন হাসপাতালে? হতে পারে যেসব মার্কিন সেনা উহানে ঐ ভাইরাস এনেছিল তারাই... স্বচ্ছ হোন। মানুষকে সত্য জানান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাই।’ ঝাওয়ের ঐ টুইট চীনা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিভি সিসিটিভিতে প্রচার হয়। গ্লোবাল টাইমসেও তা ছাপা হয়।

এছাড়াও চীনের ভেতর থেকে একাধিক বিজ্ঞানী বলেই চলেছেন করোনা ভাইরাসের মহামারি চীনে শুরু হলেও ভাইরাসটির উৎপত্তি চীনে হয়নি।

ইরানের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে- বিবিসি

ইরানের অঙ্গুলি আমেরিকার দিকে
চীনের পাশাপাশি ইরানের ভেতরেও ব্যাপক মানুষের বিশ্বাস এই জীবাণু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এমনকি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি সরাসারি বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র।’ গত ৫ মার্চ সালামি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে চীনে এবং পরে ইরানের বিরুদ্ধে ‘জীবাণু-অস্ত্রের সন্ত্রাসী হামলা’ চালিয়েছে।”

পরদিনই ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য হেশমাতোল্লাহ ফাতালহাতপিশে মন্তব্য করেন, ‘ট্রাম্প এবং পম্পেও করোনা নিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন...এটা কোনো সাধারণ রোগ নয়, এটা ইরান এবং চীনের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্রের হামলা।’

রাশিয়ার ভূমিকা
রাশিয়ার ভেতর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও রাশিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মিডিয়ায় চীন এবং ইরানের এসব অভিযোগ-তত্ত্ব জোরেসোরে প্রচার করা হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইইউ’র একটি মনিটরিং দল মার্চের ১৬ তারিখ পর্যন্ত দুই মাসের এক অনুসন্ধানে ৮০টি প্রমাণ পেয়েছে যে, ক্রেমলিনের সাথে ঘনিষ্ঠ মিডিয়ায় করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা ধরণের অপ্রচার চালানো হচ্ছে। রুশ বিভিন্ন মিডিয়ায় এ ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ব্রিটেনকেও দায়ী করা হচ্ছে।

সরকার সমর্থিত স্পুটনিক রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চীনকে বাধ্য করতে ব্রিটেন এ কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। রুশ একটি জনপ্রিয় টিভি টকশোতে (দি বিগ গেম) ইগর নিকুলিন নামে রুশ একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট বলেন, “ব্রিটেন এই করোনা ‘অস্ত্র’ তৈরি করেছ। ব্রিটেনের পোর্টান ডাউনে একটি গবেষণাগারে বহুদিন ধরেই নানা জীবাণু এবং রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কাজ চলছে।” তবে রুশ সরকার দাবি করেছে, এসব বক্তব্যের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

রাশিয়ার একটি বিমানবন্দরে যাত্রীদের করোনাভাইরাসের উপসর্গ পরীক্ষা করা হচ্ছে- বিবিসি

আমেরিকার তীর চীনের দিকে
আমেরিকার ভেতরেও করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং ঘুরে ফিরে বলেই চলেছেন, করোনা ভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী। ট্রাম্পের সমর্থক হিসাবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিই খোলাখুলি বলছেন, করোনা ভাইরাস চীনের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র।

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কংগ্রেসে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এমন এক রিপাবলিকান রাজনীতিক জোয়ান রাইট টুইট করেছেন, ‘উহান ল্যাবরেটরিতে এই করোনা ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে, এবং ঐ গবেষণায় চীনাদের সহায়তা করেছেন বিল গেটস।’ পরে সমালোচনার মুখে তিনি ঐ টুইট মুছে ফেলতে বাধ্য হন। তবে আমেরিকার কট্টর ডানপন্থী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা ভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোনো শেষ নেই।

পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন একদল বিজ্ঞানী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যেখানে তারা বলেছেন, ‘জীবজন্তুর শরীর থেকেই এই করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভয়, গুজব এবং ঘৃণা ছড়াবে যাতে এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহত হবে।’

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি