পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পাশে সেই বিতর্কিত মেয়র মুক্তার আলী

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার সেই বিতর্কিত মেয়র মুক্তার আলী ফের দেখা গেছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পাশে। এ নিয়ে রাজশাহীর রাজনীতিতে তোলপাড়া শুরু হয়েছে। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে।

বুধবার বাঘার একটি অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীর পাশে তাকে দেখা যায়। 

মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক, অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনের একাধিক মামলা। তদন্ত ও বিচারাধীন এসব মামলায় দুইবার গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন মুক্তার আলী। 

এছাড়াও মেয়র ও দলীয় পদ থেকেও বহিষ্কার হন মুক্তার আলী। তবে কয়েক মাস আগে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তার মেয়র ও দলীয় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাজশাহীর বাঘায় আনসার-ভিডিপি কার্যালয় ভবনের উদ্বোধন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে যোগদেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। 

তিনি ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর থেকে তার পাশেই দেখা যায় মাদক ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলার আসামী মুক্তার আলীকে। এছাড়াও ওই অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এসময় মুক্তার আলী প্রতিমন্ত্রীর ডান পাশে ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ‘‘পৌরসভার মেয়র মুক্তারকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে। এসব কারণে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও মুক্তারের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একটি অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীর পাশে তাকে দেখা যাওয়াই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিস্মিত হয়েছে।”

এছাড়াও মুক্তার আলী দলীয় ও মেয়রের পদ ফেরত পাওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সহকারী একান্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাঘা উপজেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেনস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান। আর ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যম কর্মীদের পররাষ্ট্র বিষয়ক সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একটি ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। এসময় প্রতিমন্ত্রীর বামে ডানে ও পেছনে অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে যান। এক সময় আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীও পাশে দাঁড়ান। যেটা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানতেন না এবং জানারও কথা নয়।’’

২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি বাঘা পৌরসভার নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তার আলী। এরপর নির্বাচনের আগে ও পরে মুক্তার আলীর নেতৃত্বে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে পৌরসভা এলাকায়।

ওই বছরের ৬ জুলাই আড়ানীর এক কলেজ শিক্ষককে পেটানো ও তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় পুলিশ মেয়র মুক্তার আলীর পিয়াদাপাড়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মুক্তার পালিয়ে যান। তবে বাড়িতে তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, মাদক ও নগদ এক কোটি টাকাসহ মেয়রের স্ত্রী ও ভাতিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

এর দুদিন পর ৮ জুলাই পাবনার ঈশ্বরদীতে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১২ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এর আগে তাকে দলীয় পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।

বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুল আলম বলেন, ‘‘মেয়র মুক্তার আলী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। এ কারণে দল তাকে বহিষ্কার করেছিল। তবে কয়েক মাস আগে তিনি বহিস্কাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এরপর তার বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করা হয়েছে বলে শুনেছি। এছাড়াও তিনি মেয়রের পদও ফিরে পেয়েছেন।’’

বাঘা থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন, দলের নেতাকর্মী মারপিট, প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট, মাদক, অস্ত্র, বিস্ফোরক এবং সন্ত্রাস দমন আইনে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলা তদন্তধীন। 

উচ্চ আদালত থেকে সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন।

এএইচ