ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৭ আগস্ট ২০২৫

সুন্দরবনে ফের দস্যুদের অপতৎপরতা

মোংলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:১১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

সম্প্রতি সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পরও বন নির্ভরশীল জেলে-বাওয়ালীরা স্বস্তিতে নেই।নতুন দস্যু বাহিনীর আবির্ভাবে আবারো জেলেদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আগের মতই শুরু হয়েছে জেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়। 

বৃহস্পতিবারও (২৬ সেপ্টেম্বর) জেলে অপহরণের অভিযোগে অপহৃত জেলেসহ দু’ দস্যুকে আটক করা হয়েছে। 
কোস্টগার্ড তাদেরকে আটক করে। আটক দস্যুরা হল খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার হোসেন শেখ-(২৮) ও রুবেল শেখ (২১)। তাদেরকে সন্ধ্যায় মোংলা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন (মোংলা সদর দপ্তর) অপারেশন কর্মকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম। 

এদিকে, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পরও র‌্যাব ও কোস্ট গার্ডের সাথে বন্দুক যুদ্ধে কয়েকজন দস্যু নিহত হয়েছে। আত্মসমর্পণ ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পরও নতুন বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটায় শূন্যের কোঠায় আসছেনা দস্যুতা। গত ৮, ৯ ও ১০ সেপ্টম্বরও সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছি ও দোবেকি এলাকা থেকে অন্তত ১৪ জন জেলেকে অপহরণ করে বনদস্যু আমিরুল বাহিনী।এসব জেলেরা সুন্দরবনে মাছ আহরণ করতে গেলে মুক্তিপনের দাবিতে তাদেরকে অপহরণ করা হয়।
 
র‌্যাব-৮ এর সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে টিকতে না পেরে একাধিক ভয়ংকর দস্যুরা আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়। আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে কয়েকটি বাহিনীর দস্যুরাও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ২০১৬ সালের ৩১ মে বনদস্যু মাষ্টার বাহিনী তার ১০ সদস্যদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে ৫২টি দেশি বিদেশি অস্ত্রসহ চার হাজার ৫’শ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। 

এ পর্যন্ত সর্বশেষ ৩২টি দস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এই সময়টুকু সুন্দরবনে কয়েকদিন বাতাস স্বস্তির বইলেও আবারও দস্যুদের উৎপাত শুরু হয়েছে।এতে নতুন করে ভীতি দেখা দিয়েছে জেলে-মহাজনদের মাঝে। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুন্দরবন উপকুলের কয়েকজন জেলে জানান, গত দেড় দুই মাসের মধ্যে দস্যুরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৫০ জন জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।আমরা খুবই আতংকের মধ্যে আছি, স্বস্তিতে মাছ ধরতে পারছিন না। 

এরই মধ্যে সম্প্রতি সুন্দরবনে পরিদর্শনে এসে বন ও পরিবেশ বিষয়কমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন জানান, ‘এখনও যে সকল দস্যুবাহিনীগুলো আছে তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে’।
 
তবে দস্যুরা বসে নেই প্রতিনিয়তই তারা মুক্তিপণ আদায়ে জেলেদের অপহরণ করে চলছে। এদের মধ্যে রফিক, আমিনুল, জিয়া, রবিউল ও জোনাব বাহিনী অন্যতম। বনদস্যু রফিক ছাড়া বাকি সবার বাড়ি সাতক্ষীরা বলে জানা গেছে। 

কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) অপারেশন কর্মকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম জানান, এসব বাহিনীদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। 

তিনি আরও জানান,‘প্রধানমন্ত্রী যখন সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করলো, তার আগে বেশ কয়েকটি দস্যুবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। তবে সেময় কিছু কিছু দস্যু আত্মসমর্পণ করেনি।তারাই এখন সংগঠিত হয়ে সুন্দরবনে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।কিন্তু আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। 

লে.ইমতিয়াজ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কোস্ট গার্ডের টহল দলের সদস্যরা সুন্দরবনে নিয়মিত অভিযান চলাকালে জেলেদের মাধ্যমে ৩ জেলে দস্যুদের হাতে অপহৃত হওয়ার খবর পায়। এমন খবরের ভিত্তিতে হারবাড়িয়া ফরেস্ট অফিসের অদূরে ডাকাতিয়া খালে তল্লাশী চালিয়ে একটি সন্দেহভাজন নৌকা চ্যালেঞ্জ করে।এ সময় দস্যু গ্রুপের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধারালো অস্ত্রসহ দু’দস্যুকে আটক ও জিম্মি ৩ জেলেকে উদ্ধার করে।
 
আটক দস্যুরা হলো, খুলনা জেলার দিগলিয়া উপজেলার হোসেন শেখ(২৮) ও রুবেল শেখ(২১)।আর উদ্ধার জেলেরা হলো, মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা গ্রামের শাহজাহান(৬০), একই উপজেলার  দক্ষিণ চিলা গ্রামের আশরাফ(৬০) এবং রামপাল উপজেলার অজিত মজুমদার(৫৫)।
এ তিন জেলেকে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণের দাবিতে চারদিন আগে অপহরণ করে দস্যু রফিক বাহিনীর সদস্যরা। 
আই/কেআই


 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি