ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

একুশে টেলিভিশনে প্রতিবেদনের পর

ডিসি’র সহযোগিতায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল শিশু বনমালী

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:১৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

(বাঁয়ে) অপারেশনের আগে এবং (ডানে) অপারেশনের পরে শিশু বনমালী।

(বাঁয়ে) অপারেশনের আগে এবং (ডানে) অপারেশনের পরে শিশু বনমালী।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত জেলার কত অসহায় পরিবার, কত মানুষ কতভাবে যে তাঁর কাছে সহায়তা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন, সে হিসেব হয়তো বা কেউ দিতে পারবেন না। তবে যে অসহায় মানুষগুলো তাঁর কাছ থেকে খালি হাতে না ফিরে সরাসরি উপকার পেয়েছেন, তাদের হৃদয়ে ইতোমধ্যে তিনি একজন ’মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড.কেএম কামরুজ্জামান সেলিম-এর সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাৎ করতে এসে ডিসি কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এমনিভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সদর উপজেলার বরুনাগাঁও বাসিয়াদেবী গ্রামের দিনমজুর অসহায় পরিবারের সদস্য গোপেশ চন্দ্র সেন, তাঁর স্ত্রী প্রমিলা রানী সেন ও পুত্রবধূ সম্পা রানী সেন। 

তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপকারের কথা স্বীকার করতে গিয়ে আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের পানি ফেলে কথাগুলো বলছিলেন। তখন তাদের কোলে ছিল সুস্থ হয়ে মায়ের কাছে ফেরা শিশু বনমালী সেন। 

শিশুটি জন্মেছিলো কোমরের পিছনে নীচের দিকে ছোট্ট একটি টিউমার নিয়ে। শিশুটির বয়স বাড়ার সাথে সাথে বড় হয়ে উঠছিল সেই টিউমারটিও। যার কারণে শিশুটি ব্যথায় যখন চিৎকার করে কান্নাকাটি করতো তখন শুধু সেই শিশুর পরিবার নয়, পাড়া-প্রতিবেশিগণও অসহায়ভাবে চেয়ে থাকতেন। কারণ চিকিৎসকগণ জানিয়েছিলেন- ঢাকায় অথবা দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে দ্রুত চিকিৎসা না করালে শিশু বনমালীকে সুস্থ অথবা বাঁচিয়ে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং এ চিকিৎসা করতে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে। 

এতো টাকা ব্যয়ের কথা শুনে দিনমজুর পরিবারটির মাথায় যেন বাঁজ পড়ার মতো অবস্থা হয় এবং অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে থাকে। কারণ, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যাদের, তারা এত টাকা কোথায় পাবে? প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে শিশু বনমালীর চিকিৎসার কথা ভাবতেই পারছিলেন না তারা। অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে বড় অসহায় অবস্থায় দুঃশ্চিন্তায় পরিবারটির দিন কাটছিল। 

এরই এক পর্যায়ে পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ চ্যানেল একুশে টেলিভিশনে শিশু বনমালীর অসুস্থতা ও তার পরিবারের অসহায়ত্ব নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। সেই প্রতিবেদন দেখে তাঁর চিকিৎসায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম। তিনি প্রাথমিকভাবে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন শিশুটির অভিভাবকের হাতে।

সেই টাকা পেয়ে অভিভাকরা শিশুকে ঢাকায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শুরু হয় তার সেই টিউমার নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ গবেষণা আর চিকিৎসা। প্রায় দেড়মাস চলে এই কার্যক্রম। এ সময় আরও সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন জার্মান প্রবাসী সৈয়দ শাকিল নামের এক হৃদয়বান ব্যক্তি। 

অবশেষে অপারেশনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে পূর্ণ সুস্থ হয়ে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছে শিশু বনমালী। জন্মের পর থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত যে শিশুটি একটি টিউমারের কারণে চিৎ হয়ে আরামের সাথে শুয়ে ঘুমোতে বা বসতে পারছিল না, যার ব্যথার ক্রন্দনে পাড়া-প্রতিবেশ ভারী হয়ে উঠতো। সে এখন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে, উঠে বসছে, মনের আনন্দে বাড়ির উঠোনে খেলে বেড়াচ্ছে। 

সুস্থ শিশু বনমালীকে কোলে নিয়ে তার অভিভাবকগণ জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম-এর কাছে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি সুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে দেখে আনন্দে তাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন। এসময় তিনি শিশু বনমালীর সুস্থ ও সফল জীবন কামনা করেন এবং তার মা-বাবাকে তাদের সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়ে যাতে খেয়াল রাখেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দেন।

পরে তিনি শিশুটির জন্য পরিবারের কাছে বেশকিছু শিশু খাদ্য-সামগ্রীসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেন এবং অপ্যায়ন করান। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলমসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকতাগণ উপস্থিত ছিলেন। 

এতে জেলা প্রশাসকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ তাকে আশীর্বাদ করেন অসহায় ও হতাশামুক্ত শিশুটির পরিবার এবং স্বস্তিপ্রাপ্ত পাড়া-প্রতিবেশিগণ।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি