ঢাকা, শুক্রবার   ০৯ মে ২০২৫

দক্ষিণাঞ্চলে বেপরোয়া লঞ্চ ও স্টাফরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৪, ২৩ জুলাই ২০২২

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আরিফ হাওলাদার (২০)

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আরিফ হাওলাদার (২০)

Ekushey Television Ltd.

এবারের ঈদ যাত্রায় ঢাকা আমতলী নৌ-পথে লঞ্চ চলাচলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গত ১৪ জুন সুন্দরবন-৭ লঞ্চটি পায়রাকুঞ্জ ঘাটে ঘাট দেয়ার সাথে সাথে লঞ্চে থাকা স্টাফরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইজারাদারসহ কয়েক জনকে আহত করেন বলে জানান এলাকাবাসী। 

এরপর থেকে লঞ্চ মালিকেরা আর পায়রাকুঞ্জ ঘাটে যাত্রী ওঠা নামা করেন না। ঘাটটি বন্ধ করে দেয়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীপথে সুন্দরবন নেভিগেশনের মালিক বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিন্টু মিয়া নাকি পায়রাকুঞ্জ ঘাটে লঞ্চ ভিড়াতে নিষেধ করে দিয়েছেন। 

এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২১ জুলাই তরঙ্গ-৭ নামে একটি লঞ্চের স্টাফরা ভয়াং ঘাটে এক জেলেকে মেরে রক্তাক্ত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। 

ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা আমতলী রুটে মির্জাগঞ্জে ভয়াং বাজারের সামনে পায়রা নদীতে ইলিশ ধরার জাল কাটাকে কেন্দ্র করে ঢাকা-আমতলী রুটের এম ভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের স্টাফদের হামলায় মো. আরিফ হাওলাদার (২০) নামে এক জেলে গুরুতর আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ভয়াং বাজারে লঞ্চঘাটে এ ঘটনা ঘটে। 

আহত আরিফ ভয়াং গ্রামের মো. জালাল হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে সে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ওই জেলেকে লঞ্চের ভিতরে নিয়ে মারধরের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। 

ভিডিওতে দেখা যায়, ১০-১২ জন যুবক (লঞ্চের স্টাফ) মিলে ওই জেলেকে অতর্কিতভাবে মারধোর করছেন এবং ছেলেটি কান্নাকাটি করে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্টাফরা তাকে ঘিরে ধরে একের পর এক কিল, ঘুষি, লাথি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। মারধরের একপর্যায়ে ছেলেটি লঞ্চের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে সেখান থেকে  টেনে তুলে আবারও মারধোর করা হয়। 

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

আহত জেলে আরিফ জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা কয়েকজন জেলে নদীতে ইলিশ ধরার জন্য জাল ফালাই। লঞ্চ চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রেখেই আমরা জাল ফেলেছিলাম। আমতলী থেকে আশা এম ভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চটি সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে না এসে আমাদের জালের উপর দিয়ে আসায় আমাদের ৩-৪ জন জেলের জাল কেটে যায়। লঞ্চটি ভয়াং পল্টুনে ঘাট দিলে আমরা (৪ জন) জেলে এসে মাস্টারকে জাল কাটার বিষয় জিজ্ঞেস করলে তারা আমাদেরকে গালিগালাজ শুরু করেন। এতে প্রতিবাদ করাতে ক্ষিপ্ত হয়ে লঞ্চের স্টাফরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলার শিকার হয়ে আমার সাথে থাকা অন্য জেলেরা দৌড়ে পালিয়ে গেলেও আমাকে টেনেহিঁচড়ে লঞ্চের ভিতরে নিয়ে যায় এবং পল্টুন থেকে লঞ্চ ছেড়ে দেয়। এরপর লঞ্চের ভিতর ১০-১২ জন স্টাফ মিলে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। পরে কাকড়াবুনিয়া পল্টুনে লঞ্চটি ঘাট দিলে স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে ভর্তি রাখেন। বর্তমানে আমার চিকিৎসা চলছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা গরিব মানুষ, মাছ ধরেই আমাদের সংসার চলে। এটাই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল। সেই জাল ওরা কেটে দিল, আবার আমাকে মারধরও করল। এখন আমরা কি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করব। আমি হামলাকারীদের কঠিন বিচার চাই এবং আমাদের জাল ফেরত চাই। আমি জাল ফেরত না পেলে আমার পরিবার পরিজন না খেয়ে মরবে।

এদিকে এম ভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের কেরানী মো. এনায়েত হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওদের জাল কেটে গেছে, এটা সত্য। তবে ওরা প্রথমে আমাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় প্রতিহত করার জন্য আমাদের যা করা দরকার ছিল সেটাই করেছি। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি। তিনি বলেছেন, দ্রুত সমাধান করে দিবেন।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি