ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪

একুশে আগস্টের গ্রেনেট হামলায়

প্রধানমন্ত্রীর নিহত দেহরক্ষীর পরিবার খোকসায় কেমন আছেন

রঞ্জন ভৌমিক

প্রকাশিত : ১৮:৫৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

 ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছেন  মাহাবুবুর রশিদ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ছিলেন  মাহাবুব। নিহত মাহাবুবের মা বাবা ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখতে চান ।

প্রতি বছর ২১ আগস্ট এলে টেলিভিশনে ২০ বছর আগেকার নৃশংস গ্রেনেড হামলার দোষীদের শাস্তি বাস্তবায়নের নানা খবর শোনেন মা হাসিনা বেগম। মাঝে মাঝে রায় বাস্তবায়নের আশার আলোও দেখেন। কিন্তু দিবসটি গেলেই সবাই যেন ভুলে যায় সব কিছু। কিন্তু তিনি কী করে ভুলবেন! ছেলের  হত্যাকারীদের ফাঁসি চান মা হাসিনা বেগম এবং বাবা হারুন অর রশীদ । তাছাড়া চান মাহাবুবের কবরকে যেন সংরক্ষণ করা হয় ভালোভাবে।

কুষ্টিয়ার খোকসার জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামে নিজের ঘরের বিছানায় বসে নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা বলছিলেন হাসিনা বেগম। তিনি জানালেন, শারীরিক অবস্থা ভালো নয় তার। এখন আর বেশি ভাবতেও পারেন না। বুকের মধ্যে ধড়ফর করে। কথায় কথায় জানালেন, মাহবুবুর রশীদের স্ত্রী তাদের খোঁজখবর নিয়মিতই রাখেন। মাহাবুবুরের দুই ছেলে আশিক ও রবিনকে নিয়েও স্বপ্ন দেখেন হাসিনা। তারা বড় হয়ে বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে-এটাই প্রত্যাশা তার।

সংসারের উপার্জনক্ষম ছেলে মাহাবুবুর রশিদ ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের  আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়ানক গ্রেনেড হামলায় নিহত হওয়ার পর থেকে তিনি অপেক্ষা করছেন,  সাজার বাস্তবায়ন দেখার । 

বাবা হারুন অর রশীদ জানান, একসময় বিড়ি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। শত অভাবের মধ্যেও তার ১০ সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ করেননি। দ্বিতীয় ছেলে মাহাবুবকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের বাড়ির পাশে ফুলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করলে তিনি সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা না থাকায় তাকে মামা আবদুর রব নিয়ে গিয়ে রাজবাড়ীর পাংশার বাহাদুরপুর শহীদ খবির উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। মামাবাড়ি থেকেই ১৯৮৪ সালে এসএসসি পাস করেন মাহবুব। তারপর সংসারের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীর মেজর পর্যায়ের এক কর্মকর্তার বাসায় ৬০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন মাহবুব। পরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পান।

মাহাবুবের চাকরিতেই দরিদ্র সংসারটিতে আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে। পাঁচ বোনের তিন বোনকে বিয়েও দেন। নির্দিষ্ট মেয়াদে চাকরি শেষে গ্রামে ফিরে ব্যবসার উদ্যোগ নেন তিনি। তাতে ভালো না হওয়ায় আবার চাকরির সন্ধান করতে থাকেন।

এরই মধ্যে মাহাবুব তার সতীর্থ সৈনিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ২০০০ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। পরে বিশ্বস্ততা অর্জন করায় অল্প সময়ের মধ্যে নেত্রীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর দায়িত্বও পেয়ে যান। মাহাবুব তার স্ত্রী শামীমা আক্তার আসমা এবং দুই ছেলে আশিক ও রবিনকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে সফল সৈনিক ছিলেন। মৃত্যুর দুই মাস আগে বাড়ি এসে বাবার অজুর জন্য টিউবওয়েল বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। পরের ছুটিতে টিউবওয়েলের গোড়া পাকা আর শোবার ঘরের অসমাপ্ত বেড়া মেরামত করার কথা ছিল তার।

কিন্তু ২১ আগস্টের ঘাতকদের বুলেট তার সব স্বপ্ন কেড়ে নেয়। মাহাবুব বাড়ি ফেরেন সাদা কাফনে মোড়ানো অবস্থায়। তাকে সমাহিত করা হয় তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত ফুলবাড়িয়া স্কুলের পাশে।

এবারও ছেলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করেছেন বাবা হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, প্রতি মাসে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের জন্য গঠিত কল্যাণ ফান্ড থেকে যে টাকা দেওয়া হয়, তা দিয়ে দু'জনের সংসার চলতে চায় না। বয়সের ভারে হারুন অর রশিদ এখন সংসারের বড় কোন কাজ করতে পারেন না। তবে বাড়ির আশপাশের ফলমূল শাকসবজি সংসারের আয়ের উৎস বলে জানান।
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি