ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঝড়বৃষ্টির রাতে অভুক্ত পরিবারের পাশে র‌্যাব কমান্ডার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:১৫, ৪ এপ্রিল ২০২০

ঝড়বৃষ্টির রাতে অভুক্ত পরিবারের পাশে র‌্যাব কমান্ডার শামীম

ঝড়বৃষ্টির রাতে অভুক্ত পরিবারের পাশে র‌্যাব কমান্ডার শামীম

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় তা প্রতিরোধে সারাদেশে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে শ্রীমঙ্গলেও সচেতনতার পাশাপাশি বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে র‌্যাব। যাতে স্থানীয়সহ দেশবাসীর অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছে বাহিনীটি ও এর শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কমান্ডার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। 

গত ১৯ মার্চ রাতে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনীতে স্থাপন করেন হাত ধুয়ার জন্য নিরাপদ কর্নার। ২০ মার্চ সকাল থেকে এই নিরাপদ কর্নারে গিয়ে শত শত মানুষ হাত ধুতে থাকেন। বিষয়টি দ্রুত গণমাধ্যমে ও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার হলে বিভিন্ন জন সারাদেশে এমন উদ্যোগ নেন। যা দেশবাসীকে হাত ধোয়ার প্রতি সচেতন হতে সহায়তা করে। 

এদিকে, গত ২৫ মার্চ থেকে দোকান মালিক সমিতি সারাদেশে সকল দোকানপাঠ বন্ধ করে বাড়িতে অবস্থান করেন। আর ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহনও। বেকার হয়ে পড়েন পরিবহন শ্রমিকরাও। কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নিন্ম আয়ের মানুষগুলোর প্রয়োজন পড়ে খাদ্য সহায়তার। সরকার খাদ্য সহায়তার ঘোষণা দিলেও বিতরণের প্রস্তুতি নেয়ার পূর্বে কিছু কিছু পরিবারের খাদ্য সহায়তা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে। 

আর ঠিক সেই সময় কমান্ডার আনোয়ার হোসেন শামীম তার সাধ্যমতো খাবার নিয়ে হাজির হন সেইসব পরিবারে। বিষয়টি উঠে আসে গণমাধ্যমে। র‌্যাব শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প কমান্ডার গরীব মানুষকে সাহায্য করছেন এটি শ্রীমঙ্গলে বেশ জোরেসোরে চাউর হয়। প্রতিনিয়ত গরিব মানুষের খবর আসতে থাকে তার কাছে। আর প্রতিদিনই সাধ্যমতো সাহায্যের হাত প্রশস্ত করেছেন তিনি। 

গত বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যারাত। মৌলভীবাজারের আকাশে তখন ঘন কালো মেঘ, বৃষ্টি- ঝড়ো হাওয়ার সাথে বিজলিও চমকাচ্ছে থেকে থেকে। বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ সংস্থার ত্রাণ তৎপরতাও গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে, এ সময় শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম-এর নিকট খবর আসে যে, উপজেলার ঢুলিপাড়া বস্তি এলাকার অনেকগুলো সংখ্যালঘু পরিবার সারাদিন অভুক্ত অবস্থায় আছে। রাতেও সন্তান-সন্তুতি নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে খেটে খাওয়া এ মানুষগুলোকে। 

সংবাদ পেয়ে ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই দুর্গতদের নিকট ছুটে যান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। গাড়ি চলাচলের রাস্তা না থাকলেও তিনি ও তার সঙ্গীয় র‍্যাব সদস্যরা দুই হাতে ত্রাণের বস্তা বহন করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা কাদাপানি মাখামাখি হয়ে অভুক্ত মানুষগুলোর নিকট পৌঁছান এবং মোট ১৫টি পরিবারের নিকট পৌঁছে দেন চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। এসময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সরকারি সাহায্য পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসও দেন।

সাহায্যপ্রাপ্তদের একজন শ্রীমঙ্গল কালাপুর ইউনিয়েনের ঢুলিপাড়া বস্তির বাসিন্দা বিধবা সন্ধ্যা রানী কর, যিনি তার দুই শিশু কন্যাসহ সারাদিন প্রায় অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন। আগের দিনের খবার খেয়েছেন সকালে। সূর্য পাটে যেতেই ঝড়বৃষ্টির আভাস দেখে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, সকাল থেকে যে ত্রাণের আশায় বসে আছেন, রাতেও সেটা আর পাওয়া হচ্ছে না। বিষন্নতার ছাপ তার মনের মধ্যে। কেউ ত্রাণ বা কোনো সাহায্য দেয়নি। না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান না এমপি। আর এই দূর্যোগের কারণে কারো বাড়িতে গিয়ে চেয়েও খাবার আনতে সাহস পাচ্ছেন না।

এমন সময় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে খাদ্যসামগ্রীর বস্তা নিয়ে তাদের পাড়ায় হাজির হন র‍্যাব সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে সন্ধ্যা রানী বলেন, "বৃষ্টি বাদলা হতে দেখে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন, সারাদিনের উপোস বাচ্চাগুলোকে রাতেও যেন আর উপোস না থাকতে হয়। আমি না খেয়ে থাকি কিন্তু বাচ্চাগুলোর একটা ব্যবস্থা যেন হয়। এমন সময় ভগবান র‍্যাব স্যারকে চালডাল দিয়ে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন।" 

প্রসঙ্গত, মো. আনোয়ার হোসেন শামীম খাগড়াছড়ি জেলার উত্তর বড়বিল গ্রামের আব্দুল মান্নান এবং বিলকিস বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গহণ করার পর ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১১তম স্থান অর্জন করে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। র‍্যাবে যোগদানের পূর্বে তিনি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এএসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি