ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ আগস্ট ২০২৫

নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন থাকতে হবে: সিপিডি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫২, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলের কাতারে উঠার পর্যবেক্ষণের তালিকায় রয়েছে। অর্থনৈতিক এ কাঠামোগত রূপান্তরের মুহূর্তে দেশে আসন্ন নির্বাচন। নির্বাচনে যে রাজনৈতিক দল বা জোট ক্ষমতায় যাবে, তারা মেয়াদ শেষ করবে উন্নয়নশীল দেশের সরকার হিসেবে। এ জন্য দেশের এই অর্থনৈতিক কাঠামোগত রূপান্তর টেকসই করতে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা আঙ্কটাডের স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিবেদন-২০১৮ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে এমন মতামত দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সিপিডি। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতি হচ্ছে নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সুবিধা সার্বজনীন করা। বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি শুধু সুবিধা পাবে, অন্যরা পাবে না তা হবে না। প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতির জন্য যে ধরনের উদ্যোক্তা শ্রেণি দরকার; বাংলাদেশে তা নেই। কারণ এখানকার উদ্যোক্তা শ্রেণি বিষয়ভিত্তিক সুবিধা চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সুবিধার পেছনে বেশি ছোটে, যে কারণে সরকারে উদ্যোক্তাদের ব্যাপক প্রভাব থাকলেও শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারে না। বন্দরের ভেতরের অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারে না। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি নির্বাচনেও প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি না থাকা আরেকটি কারণ। এতে ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ শ্রেণি জবাবদিহিও দুর্বল থাকে। যে কারণে তারা শক্তি নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারে না। এ জন্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন দর্শন থাকতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, বর্তমানে ব্যবসা-রাজনীতি কলুষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করছেন। কারণ কর অবকাশ, বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্সসহ অনেক ব্যবসায়ী যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন সেগুলো শুধু রাষ্ট্রীয় আনকূল্য দিয়েই সুরক্ষা সম্ভব। আবার রাজনীতিবিদরাও ব্যবসায় যাচ্ছেন। নাগরিকরা বুঝতে পারছেন না— কে রাজনীতিবিদ আর কে ব্যবসায়ী! রাজনীতি এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরের জন্য দুটি পরামর্শ দেন। নির্বাচনের আগেরটি হলো— প্রার্থীদের হলফনামায় ঘোষণা করা সম্পদ বিবরণী রাজস্ব বোর্ড দ্রুততার সঙ্গে মূল্যায়ন করে জনগণের সামনে তুলে ধরবে। সেখানে রাষ্ট্রকে দেওয়া তার কর আর সম্পদ কতটা সমন্বিত, তা নির্বাচন কমিশন বিবেচনায় নেবে। নির্বাচনের পরের পরামর্শ হলো— যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন তারা শপথ নেওয়ার সময় নিজের ও পরিবারের যে যে ব্যবসা আছে, তা ঘোষণা করবেন।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সব উন্নয়নই রাজনৈতিক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। এ জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন প্রক্রিয়া কী হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে থাকতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নয়ন রাষ্ট্র থেকে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার নীতিতে যেতে হবে। এ জন্য উদ্যোক্তাদের দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তা দিতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে গড়ে তোলার মতো তহবিল সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বৈষম্য কমানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলো কী পদক্ষেপ নেবে, তা ইশতেহারে উল্লেখ করার আহ্বান জানান।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি: আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হারে উদ্যোক্তা বেড়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে দেশে আত্মকর্মসংস্থানমূলক ও বাণিজ্যিক উদ্যোক্তা মিলিয়ে মোট উদ্যোক্তা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে ছিল ২ কোটি। সর্বশেষ হিসাবে বাণিজ্যিক উদ্যোক্তার অংশ দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সব ক্ষেত্রে সমান সুযোগ বাংলাদেশে নেই।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি