ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জনগণের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেয়া কল্যাণমূখী বাজেট: বিসিআই 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১০, ৪ জুন ২০২১

প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের উপর বিসিআই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বিসিআই পরিচালনা পর্ষদ প্রস্তাবিত বাজেটের উপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। আর এরই মধ্যে সরকার ৫০তম বাজেট মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করলেন। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা ও শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জনগণের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কল্যাণমূখী বাজেট দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বিশ্ব অর্থনীতি এখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত, ঠিক এই কঠিন সময়ে আজকের জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২% মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ নির্ধারণ করে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে এরূপ উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখমুখি হতে হবে সরকারকে।

প্রস্তাবিত বাজেটে কোন করদাতা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ১০% তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক অথবা ১০০ (একশত) অধিক কর্মচারী নিয়োগ সাপেক্ষে ৫ শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করা হয়েছে এছাড়া দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী বৃৃহত শিল্পে (অটোমোবাইল খাত) ২০বছর, হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পে ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ১০ বছর কর অব্যাহতি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ১০ বছর কর অব্যাহতি  প্রদান করায় বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার হিসেবে বিসিআই  মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে যা বিসিআই এর বাজেট প্রস্তাবের প্রতিফলন। বিসিআই মনে করে প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় শিল্প ও বেসরকারি খাত সহায়ক বাজেট। 

শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমূদয় মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে করহার ৩৭.৫%, বিসিআই এর পক্ষ হতে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি, আমরা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রাংশের উপর আরোপিত ১% এর অতিরিক্ত সকল প্রকার শুল্ক-করাদি মওকুফ করার পূনরায় অনুরোধ করছি। 

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার জন্য এবং দেশের সকল মানুষের সুলভে মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্রগ্রাম জেলার বাইরে স্থাপিত হাসপাতালে ১০ বছর  কর অব্যাহতি প্রদান করায়  মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। 

প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর ২.৫% কমানো হয়েছে যা বিসিআই স্বাগত জানায় এই কমানোর ধারাবাহিকতা নূন্যতম আগামী ৩ বাজেটে অব্যাহত রাখার সুপারিশ করছে। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর (এটি) ৪% থেকে কমিয়ে ৩% করা হয়েছে। এ আগাম কর সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করছি। ৩ কোটি টাকার টার্নওভারে নূন্যতম কর হার ০.৫০% থেকে কমিয়ে ০.২৫% করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি তবে টার্নওভারের নূণ্যতম হার ৪ কোটিতে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী কর বৎসরের করমুক্ত আয়ের সীমাঃ ৪ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব করছি। 

বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর ১৫% কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেহেতু উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেহেতু বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর প্রস্তাবিত কর হার পূন:বিবেচনার প্রস্তাব করছি। কর আরোপ হলে দেশে উচ্চশিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

কোভিড-১৯ জনিত কারনে কর্মহীনতা ও আয়- হ্রাস কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা কর্মসূচী, প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচী, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচী প্রভৃতির আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা ইতিবাচক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে বলে বিসিআই মনে করে। 

দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নজর দেয়া হয়েছে। মানব সম্পদকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করা হলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা সহজিকরন করে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রস্তাব করছি। 

মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা যা বিগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯.৬৩% বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে আমরা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করেছি। উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস স্থাপনের প্রস্তাব পূনব্যাক্ত করছে বিসিআই, যার ফলে করের আওতা ও রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব।

বাজেট ঘাটতি ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা এ ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা যার মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের কথা বলেছে। সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে এ পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে, তাহলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।  

বিসিআই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিসেস প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্খা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের এই আকার অবাস্তব নয়। দেশের অর্থনীতির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজেটের আকারও প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরো সুদৃঢ় করতে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নে জোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি