ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪

মোশতাককে ‘শ্রদ্ধা’: ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির ক্ষমা প্রার্থনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৮, ১৮ এপ্রিল ২০২২

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চেয়ে তিনি নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, “গতকালের আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে আমি যদি অজ্ঞতাবশত কোনো শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করে থাকি, তা নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী সকলের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।”

প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রোববার টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ তার বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

একাত্তরে মুজিবনগর সরকার গঠনের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদে ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তবে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার কথা বলে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

রোববারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ তাৎক্ষণিকভাবে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান এবং তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। পরে উপাচার্য আখতারুজ্জামান ওই বক্তব্যের অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করেন।

তবে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ অনুষ্ঠানের পর দাবি করেন, তিনি বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম উল্লেখ করেছিলেন, খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানাননি।

বক্তব্যের রেকর্ডে সত্যতা প্রমাণিত হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইবেন বলেও সে সময় জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের এই নেতা।

নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে আইন বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, “আলোচনাকালে মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তা উল্লেখ করি এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমার বক্তব্যের এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুলাঙ্গার এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তীকালে জাতির সাথে বিশ্বঘাতকতাকারী বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোস্তাক আহমেদের প্রতি আমি আমার ব্যক্তিগত ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করি।”

নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক দাবি করে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নীল দল থেকে প্রথমবারের মত লেকচারার ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হই।

"এরপর থেকে অদ্যাবধি আমি বহুবার নীল দল থেকে মনোনীত হয়ে সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব প্রদানকালে সর্বদা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি।”

এদিকে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যকে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহার ও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবিতে সোমবার উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি