ঢাকা, শুক্রবার   ১৬ মে ২০২৫

কিংবদন্তি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের জন্মদিন আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩৭, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১১:১৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

চার্লি চ্যাপলিন’। পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র। যদিও তার জন্মতারিখ নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে, তবে প্রচলিত রয়েছে ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন ইতিহাসের সেরা কৌতুক অভিনেতা এবং নির্মাতা চার্লি চ্যাপলিন। তার জন্মদিনের নির্দিষ্ট কোনো দলিল-দস্তাবেজ এখনও উদ্ধার হয়নি। এমনকি জন্মস্থান নিয়েও রয়ে গেছে সন্দেহ। তিনি নিজেও ফ্রান্সকে তার জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

১৮৯১ সালের স্থানীয় আদমশুমারি থেকে জানা যায়, চার্লি তার মা হান্না চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটনের অন্তর্গত। ইতিমধ্যে তার বাবা চার্লস চ্যাপলিন জুনিয়রের সঙ্গে তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। চ্যাপলিনের শৈশব কাটে প্রচণ্ড দারিদ্র্য আর কষ্টের মধ্য দিয়ে।

পিতৃহারা চ্যাপলিন অবর্ণনীয় কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছেন। শৈশব সম্পর্কে চার্লি চ্যাপলিন বলেন, যদি ভাগ্য সহায় না হতো, তাহলে আমি লন্ডনের পথে পথে চুরি করে বেড়াতাম। আর, বেওয়ারিশ লাশ হয়ে কবরে যেতে হতো। মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের একটি শহরে বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকতেন চ্যাপলিন। ভাড়া দিতে না পারায় প্রায়ই তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়া হতো। এভাবে তাড়া খাওয়ার চেয়ে চ্যাপলিন পার্কের বেঞ্চিতে ঘুমাতেই বেশি পছন্দ করতেন। চার্লি একটি মুদির দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সেখানে কাজ চলে যাওয়ার পর কাজ নিয়েছিলেন একটি ডাক্তারখানায়। সেখানে কাজ চলে যাওয়ার পর লোকের বাড়িতে বাসন মাজার কাজে লেগে যান চার্লি। এক কাচের কারখানা, রঙের দোকান, লোহার দোকান, ছাপাখানা, খেলনা কারখানা, কাঠ চেরাই কল, কাগজ বিক্রি ইত্যাদি নানা কাজের মধ্যে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

তার মা-বাবা দু’জনেই মঞ্চাভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই এ পেশাতে আসা তার কাছে সহজ ছিল। চ্যাপলিন সেই সময়ের জনপ্রিয় লোকদল ‘জ্যাকসন্স এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’-এর সদস্য হিসেবে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর ১৪ বছর বয়সে তিনি উইলিয়াম জিলেট অভিনীত শার্লক হোমস নাটকে কাগজওয়ালার চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সুবাদে তিনি ব্রিটেনের নানা প্রদেশ ভ্রমণ করেন ও অভিনেতা হিসেবে তিনি যে খুবই সম্ভাবনাময়- তা সবাইকে জানিয়ে দেন।

১৮৯৮ সালে ৯ বছর বয়সে চ্যাপলিন একটি নাচের দলে যোগ দেন। ওই দলটির সঙ্গে যুক্ত থেকে নাচ দেখিয়ে কিছু অর্থ-কড়ি রোজগার করতেন। সেই রোজগার দিয়েই চ্যাপলিন দিন কাটাতেন। ওই নাচের দলে চ্যাপলিন কমেডিয়ানের ভূমিকা পালন করতেন। ১৯ বছর বয়সে ‘ফ্রেড কার্নো’ থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ড থেকে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯১৪ সালে ২৫ বছর বয়সে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করেন চার্লি চ্যাপলিন। নাম ছিল ‘মেকিং এ লিভিং’। সিনেমার পরিচালক ছিলেন ফ্রান্সের অরি লোর্মা। এক রিলের এ সিনেমাটি প্রদর্শনের মেয়াদ ছিল মাত্র দশ মিনিট। এ সিনেমাতে চার্লি অভিনয় করেন খামখেয়ালি উচ্ছৃংখল প্রকৃতির যুবকের চরিত্রে।

১৯১৪ সালে তার নিজের সৃষ্ট দ্য ট্রাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি দিয়ে তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে মানুষকে হাসানোর মতো দুরূহ কাজটি শুধু অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যিনি করতেন অত্যন্ত সফলভাবে। সাদাসিধে ভবঘুরে একটা মানুষ, যার পরনে নোংরা ঢিলেঢালা প্যান্ট, শরীরে জড়ানো জীর্ণ কালো কোট, পায়ে মাপহীন জুতো, মাথায় কালো মতো হ্যাট আর হাতে লাঠি। যে ব্যাপারটি কারও চোখ এড়ায় না তা হচ্ছে লোকটির অদ্ভুত গোঁফ। তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন আর ঘটাচ্ছেন অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানা। আর এসব দেখেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।

চ্যাপলিনের উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেকিং অব লিভিং (১৯১৪), দ্য ট্রাম্প (১৯১৪), কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস (১৯১৫), এ ডগস লাইফ (১৯১৭), শোল্ডার আর্মস (১৯১৮), দ্য কিড (১৯২১), দ্য সার্কাস (১৯২৬), সিটি লাইটস (১৯৩১), মডার্ন টাইমস (১৯৩৬), দ্য গ্রেট ডিক্টেটর (১৯৪০), দ্য গোল্ড রাশ (১৯৪২), লাইম লাইট (১৯৫২), এ কিং অব নিউইয়র্ক (১৯৫৭) প্রভৃতি।

সিটি লাইট ১৯৩১ সালে নির্মিত একটি নির্বাক হাস্যরসাত্মক প্রেমের সিনেমা। এ সিনেমাটি চার্লি চ্যাপলিনের কাহিনী, পরিচালনা ও প্রযোজনায় নির্মিত। এটি কমেডি-রোমান্টিক সিনেমার ক্যাটাগরিতে আজও এক নম্বর স্থান দখল করে আছে।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি