যে কারণে নোবেল পেলেন অ্যালিসন-তাসুকু
প্রকাশিত : ১৮:৩৬, ১ অক্টোবর ২০১৮

মানবজাতি ও সভ্যতার প্রতি অনবদ্য অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি বছর পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে সুইডেনের নোবেল কমিটি। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রতি বছর রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি, পদার্থবিদ্যা এবং চিকিৎসা; এই ৫টি বিষয়ে অনন্য কাজ করা ব্যক্তিদের পুরস্কার দিয়ে আসছে এই কমিটি। ১৯৬৮ সালে এর সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনীতি। এ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে কমিটি।
যুক্তরাষ্ট্রের জেমস পি. অ্যালিসন এবং জাপানের তাসুকু হনজো’কে এ বছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়েই ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করার তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এই দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। এই দুই ব্যক্তির বিস্তারিত জেনে নিন এই প্রতিবেদনে।
জেমস পি. অ্যালিসন
১৯৪৮ সালের ৭ আগস্ট মার্কিন মুল্লুকের টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেন এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। তিন ভাই এর মধ্যে তিনি সবথেকে কনিষ্ঠ। অষ্টম শ্রেণীতে থাকার সময় অংক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক বাড়ে এলিসনের। ১৯৬৯ সালে মাইক্রোবায়োলজি’তে (অণুজীববিদ্যা) বিএসসি করেন তিনি। এর চার বছর পর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রী।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন জেমস অ্যালিসন। ক্যারিয়ারের দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করছেন তিনি। আশির দশকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করেন ‘টি-সেল’।
টি-সেল বিষয়ে জেমস পি অ্যালিসনের একটি উক্তি বেশ বিখ্যাত। তিনি বলেন, “Once You have generated T cells that can recognize cancer, you’ve got them basically for rest of your life”. ১৯৯২ সালে তিনি আবিষ্কার করলেন টি-সেলের মূল কার্যকরী উপাদান হলো ‘সিডি-২৮’ নামের একটি মলিকিউল।
এই মলিকিউলের অস্তিস্ত্ব নিয়ে যখন অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন তখনই ১৯৯৫ সালে তিনি আবিষ্কার করেন ‘সিটিএলএ-৪’। একই সাথে তিনি প্রমাণ করে দেখান যে, এই সিটিএলএ-৪ এর কার্যকারিতাকে দমিয়ে রাখে সিডি-২৮ যা দিয়ে ক্যান্সার প্রতিহত হয়।
মূলত এই আবিষ্কারের পর থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধে এলিসনের তত্ত্বকেই কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জেমস পি অ্যালিসন বর্তমানে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যান্সার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এই অধ্যাপক।
মাংসের বারবিকিউ খুব পছন্দ অধ্যাপক এলিসনের। অবসর সময়ে ‘দ্য চেকপয়েন্ট’ ব্যান্ডে হারমোনিকা বাজান অধ্যাপক জেমস পি এলিসন।
তাসুকু হনজো
জাপানি চিকিৎসাবিজ্ঞানী তাসুকু হনজো ১৯৪২ সালের ২৭ জানুয়ারী জাপানের কিওটো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা ও ক্যারিয়ার মিলিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় কিওটো বিশ্ববিদ্যালয়েই কাটিয়েছেন। ১৯৬৬ সালে মেডিসিন বিষয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন হনজো।
১৯৭৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রী। এর আগে ১৯৭১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল রসায়ন বিভাগে অর্জন করেন আরও একটি বিএসসি ডিগ্রী।
তাসুকু হনজো ক্যারিয়ারে নিজেকে একজন সফল ইমিনোলজিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কোষের ত্বকে ‘প্রোগ্রামড সেল ডেথ প্রোটিন-১ বা পিডি-১’ আবিষ্কারের জন্য ব্যাপক খ্যাতি পান তাসুকু হনজো। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ ধ্বংস করা থেকে বিরত রাখতে পারে এই প্রোটিন।
একই সঙ্গে অ্যাক্টিভিশন ইনডিউসড সিডিটিন ডিমাইনেক আবিষ্কার এবং সাইটোকাইনস চিহ্নিত করণের জন্যও বেশ বিখ্যাত তাসুকু। কোষ বিষয়ে তার বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে “Genes hold within themselves the ability to change”.
অধ্যাপক ড. তাসুকু হনজো বর্তমানে কিওটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্স স্টাডি এর ডিসটিংগুইশড প্রফেসর এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি এবং জেনোমিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। একই সাথে জাপানের ফাউন্ডেশন অব বায়োমেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন এই অধ্যাপক। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ইমপেরিয়াল পুরস্কার, ২০১২ সালে কোচ প্রাইজ, ২০১৪ সালে টং পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে কিওটো পুরস্কার অন্যতম। সর্বশেষ চলতি বছর চিকিৎসা শাস্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জেমস পি এলিসনের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেলেন এই অধ্যাপক ড. তাসুকু হনজো।
এ সংক্রান্ত আরো খবর
চিকিৎসায় নোবেল পেলেন অ্যালিসন ও তাসুকু
//এস এইচ এস//
আরও পড়ুন