ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

তোর মিষ্টি-দুষ্ট হাসিটা অনেক মিস করবো বন্ধু!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:০২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:০৮, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মামুনুর রশীদের সঙ্গে লেখক

মামুনুর রশীদের সঙ্গে লেখক

হঠাৎ এক দুপুরে একটা মানুষ নিউজ রুমে ঢুকেই জড়িয়ে ধরেই মিষ্টি হেসে বললো, ভাই চলে আসলাম তোমাদের সঙ্গে।  আমিও বললাম, দারুণ।  একসঙ্গে কাজ করা হয়নি কখনো! এবার হবে।

তার মাসখানেক পেরুতেই আরেকদিন খুব উত্তেজিত হয়ে বলল, ভাই আপনি নাকি আমাদের ব্যাচের।  তাইলে তো আমরা বন্ধু, সেই থেকে আমাদের বন্ধুত্বের শুরু। 

এরপর প্রধানমন্ত্রী বিটে চলে আসা, আরো কাছাকাছি, দুজনে মিলে কী পরিশ্রমটাই না আমরা করেছি। কী দারুণ ছিল আমাদের সমঝোতা, এমন টিমমেট সত্যি দারুণ এক অভিজ্ঞতা! কতো শতো কঠিন সিদ্ধান্ত, কঠিন কঠিন সব মিটিং আমরা চোখের নিমিষে শুধু ইশারায় সামলে নিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।

গণমাধ্যমের পলেটিক্স কোনোদিন আমাদের ছুঁতে পারেনি।  এটাই ছিল আমাদের বন্ধুত্বের অনন্য দিক। যতো কঠিন সময় এসেছে আমরা উড়েয়ি দিয়েছি তা ইটিভির গলিতে প্রাণোচ্ছোল আড্ডায়।

এইত পরশু সকালে ফোন দিয়ে কতো গালাগাল করলো।  কর্পোরেট হয়ে গেছিস, খোঁজ রাখিস না।  বললাম, ঐদিকে যেতে আর ভালো লাগে না, বাসায় আয় তুই, ভাতিজার সাথে খেলে যা।  বলল, আসুমনে।  অহন একটা কাম করে দে, দাদারে একটা ফোন দে।  এবার পাসপোর্ট রেখে দিছে, তুই একটু বলে দে প্লিজ।  বললাম, ওকে বলতেসি, কিন্তু বলাবলিতে কাজ হয় না, তুইও জানিস। মামুন বলল, আমার জিদ এটা আমি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন কভার করবোই, জানিস না তুই। 

 আজ মামুনের পার্সপোর্ট আনার কথা ছিল, আরেকটা স্বপ্ন পূরণের দিন ছিল, বোকা রে আজ তোর জন্মদিনও ছিল।  কিভাবে পারে মানুষ! বিধাতাও বা কিভাবে পারে এমন হাসিখুশি একটা ছেলেকে এভাবে অকালে ফেরত নিতে নিজের কাছে।  নিজের জন্মের দিনে বাবার মৃত্যুর পর থেকে সারাটা জীবন ঠিকভাবে জন্মদিনই পালন করলো না মামুন।  দুষ্ট একটা হাসি সবসময় মুখে নিয়ে জীবনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এভাবে চলে যেতে হয় রে বোকা!

গতকাল রাত এগারোটার দিকে খবর পেতে শুরু করি, প্রথম পনের মিনিট বিশ্বাসই করিনি। এদিক সেদিক ফোন করা বাদ দিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস খোকন ভাইকে ফোন করলাম।  ‘আদেলরে আমাদের মামুন আর নাই..’ হুড়মুড় করে কান্নায় ভেঙে পরলেন ভাই।  বারান্দার গ্রিলটা ধরে বসে পরলাম, এও সম্ভব! চোখের পানি ধরে রাখা দায়! কেন মামুন! এভাবে কাঁদিয়ে চিরতরে চলে গেলি তুই!

খোকন ভাইয়ের ছায়াসঙ্গীর মতো থাকতো মামুন, আপন ছোট ভাই এর মতো আদরও করতেন তিনি।  এই মানুষটাকে কাল হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে বারডেম; আজ একুশে টেলিভিশন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের হাজারো মানুষের ভিড়ে শোকে বিহবল হয়ে ঘুরতে দেখেলাম  আল্লাহ তাকে ও মামুনের পরিবারকে এই শোক সামলে নেয়ার ক্ষমতা দিন। 

এই একটা ছেলে দেখলাম, সবাই কতো মজা করতো ওর সাথে, কোনোদিন দেখি নাই কারো সাথে রাগ করতে।  মামুনের আরেকটা জিনিস আমার ভালো লাগতো, খুবই পরিপাটি থাকতো সবসময়।  অফিসের সবার সাথে উচ্ছাসের সাথে কাজ করাতে তার জুড়ি নেই।  স্ক্রিপ্ট লিখতে লিখতেই একটু টিপ্পনী ছুড়ে দেয়া, সে নিয়ে মজা, দৌড়াদৌড়ি... আজ সব স্মৃতি...

মামুন আমি তোকে নিয়ে লিখছি, আমাদের সম্পর্কের কথা লিখছি... তুই সবার কাছে কতো আপন ছিলি তুই চলে গিয়ে টের পেল সবাই।  এমনই হয় হয়ত, জীবনকে উপভোগ করতে জানতে হয়।! আমাদের মতো ছুটে চলা মানুষের ভিড়ে তুই সত্যি অনন্য।  তুমুল রাজনীতির ভিড়ে নিজেকে কি করে আলাদা করে নিয়ে ডুবে থাকতে হয় তামিল মুভিতে, কেমন করে নিংড়ে নিতে হয় জীবনের সবটুকু নির্যাস, সেই মন্ত্রটা শিখে নেয়া হলো নারে তোর কাছ থেকে।

দিলাল ভাইকে প্যারা দেয়া, উনার রুমে ঢুকে কতো মজা করা। রাশেদ ভাইয়ের সেই ডাক, কী নায়ক! কতদূর! তড়িঘড়ি করে নিউজ নামানো। একুশের ছাদে চেয়ার টেনে বসে চা খেতে খেতে অস্তমিত সূর্য দেখা! কতো স্মৃতি কতো! আর কী লিখবো!

এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না রে মামুন, যেখানেই থাকিস তুই ভালো থাকিস।  মিষ্টি-দুষ্টু ওই হাসিটা মুখে রেখে অনন্ত জীবনেও ভালো থাকিস বন্ধু আমার... তুই থাকবি হৃদয়ের গহীনে অস্ফুট পরম ব্যাথা হয়ে।  তোর মিষ্টি-দুষ্ট হাসিটা অনেক মিস করবো বন্ধু!

লেখক : মামুনুর রশীদের সাবেক সহকর্মী, বন্ধু।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি