ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ জুলাই ২০২৫

নৌবাহিনীকে ত্রি-মাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪১, ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৩:৩৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

নৌবাহিনীকে ত্রি-মাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে সরকার। 

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামে শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন। পরে বেলা ১২টার দিকে ক্যাডেটদের উদ্দেশে বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “নৌবাহিনী সব দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকে। আমি আশা করি নবীন অফিসাররা সঠিকভাবে কাজ করবে। যুদ্ধ নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব রেখেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নৌবাহিনীকে ত্রি-মাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ সরকারের সময়েই সমুদ্রসীমা বৃদ্ধি পেয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ হবে স্মার্ট, উজ্জ্বল, বঙ্গবন্ধু যেমন চেয়েছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম। আমরা জানি যুদ্ধের কী ভয়াবহ পরিণতি। আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করছি আগ্রাসনের জন্য নয়, শান্তিরক্ষার জন্য।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা স্বাধীন দেশে দক্ষ, শক্তিশালী ও আধুনিক নৌবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তার পরামর্শে নারায়ণগঞ্জ ড্রাইডক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ১৯৭২ সালে প্রথম যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ করে। তিনি যুগোস্লাভিয়া ও ভারত থেকে ৫টি আধুনিক রণতরী সংগ্রহ করেন। ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নেভাল অ্যাসাইন প্রদান করেন। নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈশাখাঁসহ ৩টি ঘাঁটি এবং ৩টি জাহাজ কমিশনিং করেন। এই দিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বানৌজা সুরমায় প্রথম নৌবাহিনীর মহড়া পরিদর্শন করেন। তার প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য থেকে যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়।”

তিনি বলেন, “আমরা ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নৌবাহিনীকে যুগোপযোগী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজগুলোর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করি। খুলনা শিপইয়ার্ডসহ অন্যান্য শিপইয়ার্ডগুলো নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করি। শুধু নিজেদের জন্য জাহাজ নির্মাণের বাইরে তারা জাহাজ রপ্তানি করে বর্তমানে স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।” 

শেখ হাসিনা বলেন, “২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষানীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু করি। গত ১৪ বছরে নৌবাহিনীতে ৪টি ফ্রিগেট, ৬টি করভেট, ৪টি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট, ৫টি পেট্রোল ক্রাফট এবং ২টি ট্রেনিং শিপসহ মোট ৩১টি যুদ্ধজাহাজ সংযোজন করি। দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল হিসেবে ‘স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ কমান্ড’ এবং নৌবাহিনীর এভিয়েশন উইং প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৭ সালে ২টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ত্রি-মাত্রিক নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করি।”

তিনি বলেন, “চলমান আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে আরও ২টি নতুন মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজন করেছি। তাছাড়া দুটি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার শিগগিরই সংযোজন করা হবে। আমাদের নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডে ৩টি  ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ট্যাঙ্ক নির্মাণ কাজ চলছে। যুদ্ধ জাহাজ, অক্সিলারি জাহাজ, অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি নৌবাহিনীতে প্রতিনিয়ত সংযোজিত হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নৌবাহিনী চট্টগ্রাম, মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, বোট এবং ব্লু-ইকোনমি সংশ্লিষ্ট মেরিটাইম প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা দিচ্ছে। আমরা মোংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্ট (কমফ্লোট ওয়েস্টে)-এর অবকাঠামো উন্নয়ন করে দিচ্ছি। নৌবাহিনীতেও ডিজিটাল প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২০৪১ সালে বাংলাদেশের জনগণ হবে প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন। ডিজিটাল ডিভাইসে শিক্ষা নিয়ে তারা প্রত্যেকে প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।”

তিনি বলেন, “আমরা একটা স্বাধীন দেশ। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে। যদি কখনো বহির্শত্রুর আক্রমণ হয়, সেটা যেন আমরা প্রতিহত করতে পারি। আর যে কোনো যুদ্ধে যেন জয়ী হতে পারি, সেভাবে আমাদের নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী; অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে আমি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা প্রশিক্ষণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই এবং প্রশিক্ষণের জন্য অবকাঠামো আমরা আওয়ামী লীগ সরকারে এসে করে দিয়েছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। ২০৪১ সালে বাংলাদেশের জনগণ হবে প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন। ডিজিটাল ডিভাইসে শিক্ষা নিয়ে তারা প্রত্যেকে প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের অর্থনীতি, যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সব কিছু আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে যাব। বাংলাদেশ হবে স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা চেয়েছিলেন; ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।”

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০২২/এ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০২২/বি ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০২০/এ ব্যাচের ৩৭ জন মিডশিপম্যান এবং ২০২২/বি ব্যাচের ৬ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ সর্বমোট ৪৩ জন নবীন কর্মকর্তাকে কমিশন দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ৯ জন নারী এবং ২ জন প্যালেস্টাইনের কর্মকর্তা রয়েছেন।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি