বায়ান্নের এই দিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন ভাষা শহীদেরা
প্রকাশিত : ১৪:৩২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | আপডেট: ১৪:৩২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
আজ অমর একুশে বায়ান্নের এই দিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাতে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন ভাষা শহীদেরা। তাদের রক্তের বিনিময়েই রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় মায়ের ভাষা বাংলা। রচিত হয় গৌরবময় ইতিহাস। বাঙালির ভাষা শহীদ দিবস, আজ বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রাম ১৯৪৮ সালে শুরু হয়ে কিছুটা স্থিমিত হলেও আবারো চুড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২এর ফেব্রুয়ারিতে। চলে গনসংযোগ, অর্থসংগ্রহ, পোষ্টার-ব্যানার লেখার কাজ। ২১শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে ধর্মঘট ঠেকাতে আগের দিন সন্ধ্যায় মিছিল-সমাবেশ বন্ধে ঢাকায় জারি হয় ১৪৪ ধারা ।
সকাল ৯ টা; সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা মেডিকেলের সামনে যখন জড়ো হচ্ছে তখন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকার স্কুলগুলো থেকেও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আসেন সমাবেশস্থলে।
বেলা এগারোটায় শুরু হয় সমাবেশ। শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির শঙ্কা, আর ৫৪ সালের নির্বাচন বন্ধের আশঙ্কায় প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গতে নিষেধ করেন। তবে উত্তেজিত ছাত্র-ছাত্রীরা সমস্বরে জানিয়ে দেন, তারা মিছিল করেই প্রাদেশিক আইন পরিষদে স্বারকলিপি দেবেন। পরে দশজন করে পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক একটি দল এগিয়ে গেলে শুরু হয় টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ।
কখনো এগিয়ে, কখনো পিছিয়ে লড়তে থাকে ছাত্রসমাজ। দুপুর পার হয়ে গেলে একপর্যায়ে শুরু হয় গুলি, বরকত-রফিক-জব্বার সালামসহ নাম না জানা অনেক শহীদ হন। বিশ্বইতিহাসে অম্লান হয় রক্তরঞ্জিত ২১শে ফেব্র“য়ারী।
গুলিবর্ষণে ছত্রভঙ্গ পরিবেশে সন্ধ্যার পর পুলিশ অনেক লাশ গুম করে ফেলে। পরের দিন শহীদদের জানাজা শেষে শোকমিছিলে আবারো গুলিতে শফিউরসহ অনেকে শহীদ হলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। উপায় না দেখে পাকিস্তানের দোষররা বাধ্য হয় প্রাদেশিক পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব পাস করে। আন্দোলনের সফলতায় ছাত্রজনতার সুদৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি করে নতুন ইতিহাস।
বয়ান্নের আন্দোলনের ফসল হিসেবেই দুবছরের মাথায় ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয় এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়। আত্মপরিচয়ের যে বীজ বায়ান্নে বপন হয়েছিল তারই চুড়ান্ত ফল আসে একাত্তরে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বমানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন