ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪

বোনের মৃত্যুও টলাতে পারেনি আকবরকে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৪৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বোন এক শক্তি। বোনের উপস্থিতি ভাইকে নিয়ে যায় সাফল্যের শিখরে। বোন হয়ে ওঠেন প্রেরণার এক মহিয়সী। বোনই স্নেহ, ভালোবাসা, মমতায় আগলে রাখেন। সঠিক পথের দিশা দেন। ভাইকে বেঁধে রাখেন অকৃতিম বন্ধনে। তবে সে বোন নেই। চীরতরে না ফেরা দেশে চলে গেছেন। এমন খবর ভাইয়ের কানে পৌঁছলে আর কি বাকি থাকে! তখন পৃথিবীটা যেন ভেঙ্গে পড়ে। নির্মোহ মনে হয় সব কিছু। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে যুব বিশ্বকাপ জিতিয়ে আনলেন আকবর আলি। আফ্রিকায় বসেই বোন হারানোর খবর পান আকবর আলি। 

তবে বোনকে হারানোর ব্যথা বুকের ভেতরটায় দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করলেও ভেঙে পড়েননি আকবর। স্বপ্ন যে বহুদূর! দেশকে বিশ্বজয়ের মুকুট এনে দিতে হবে। তাই বীরকে কি অত সহজে ভেঙে পড়লে চলে? শেষ পর্যন্ত বোনের মৃত্যুও টলাতে পারেনি আকবর আলিকে। শোককে শক্তিতে পরিণত করেন এই ক্রিকেটার। দেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হন এই ক্রিকেটার। এর মধ্য দিয়ে সবার সামনে স্থাপন করলেন পেশাদারিত্বের অনন্য এক নজির।

গতকাল রোববার পচেফস্ট্রমে ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। কিন্তু বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটের জয়টা সহজ ছিল না। দলের বিপর্যয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন আকবর। শেষ পর্যন্ত ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে লাল-সবুজদের বহুকাঙ্ক্ষিত রবিবাসরীয় জয় এনে দেন তিনি। তারই হাতে শোভা পায় চ্যাম্পিয়নের ট্রফি।

আকবরের পারিবার সূত্রে জানা যায়, ২২ জানুয়ারি যমজ সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মারা যান তার বোন। সুদূর আফ্রিকা বসেই এ খবর পান তিনি। বিসিবির এক কর্মকর্তা তার কাছে এ খবর পৌঁছে দেন। তবে দমে যাননি আকবর। এরপরেও দেশ এবং দলের স্বার্থে খেলা চালিয়ে গেছেন তিনি। শোককে শক্তিতে পরিণত করার উত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ১৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। কিন্তু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার এ আনন্দের মুহূর্তটি তার বড় বোন দেখে যেতে পারলেন না। এ কষ্ট নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে টাইগার যুবাদের অধিনায়ককে।

তিনি বিশ্ব যুব ক্রিকেটের বাদশা। বলা হয় বাংলাদেশের ‘আকবর আলী দ্য গ্রেট’। পচেফস্ট্রুমের ফাইনালে প্রতাপশালী ভারতের বিপক্ষে যে শাসন জারি করেছিলেন, তা তো বাদশা আকবরের শাসনেরই প্রতিচ্ছবি। যে ঢঙে ব্যাট করলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখলেন, তাতে অভিভূত তারই ক্রিকেট অগ্রজ মাশরাফি বিন মুর্তজা। নড়াইল এক্সপ্রেস তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আকবর তুমি অনিন্দ্যসুন্দর। তোমার কাছ থেকে শিখলাম কী করে আবেগ নিয়ন্ত্রণে  রাখতে হয়।’

বিশ্বকাপ শুরুর আগে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘আমাদের এ দলটি শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলবে।’ গত দুই বছরের পরিশ্রম, দল হিসেবে খেলার মানসিকতা এবং একাগ্রতা এই আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল আকবরকে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেখালেন তারা নতুন প্রজন্ম, কথা দিয়ে কথা রাখেন। 

খেলা শেষে সবার আগে বিসিবির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় আকবর বলেন, ‘আমরা যত ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছি, অন্য কোনো দল তা খেলেনি। বাংলাদেশের আগের কোনো দলও এই সুযোগ পায়নি। পরিস্থিতি বদলেছে। বিদেশে খেলা এবং সুন্দর পরিবেশ দেওয়ায় বিসিবিকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’

বিকেএসপির ছাত্র আকবর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার কারণেই নেতৃত্বের গুণাবলি পেয়েছেন। বয়সভিত্তিক দল থেকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘অধিনায়কত্ব আমার জন্য নতুন নয়। প্রত্যেক অধিনায়কের আলাদা দর্শন থাকে, আমি কারওটা অনুসরণ করি না। তবে উইকেটরক্ষক অধিনায়ক হিসেবে আমি পেছন থেকে ব্যাটসম্যানদের দেখি এবং সেটা কাজে লাগাই।’

এমএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি